করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত বছর ১৮ মার্চ থেকে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও। তবে সম্প্রতি সরকারের তরফ থেকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও আবাসিক হল খুলে দেওয়ার সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে। এরই প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস ও হল খুলে দেওয়ার জোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। হলগুলোর সংস্কার কাজের সাথে সাথে প্রণয়ন করা হয়েছে ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিশেষ নীতিমালা-‘স্ট্যান্ডিং অপারেটিং প্রসিডিউর’।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম ধাপে অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছে। তাদের পরীক্ষা শেষ হলে নভেম্বরে দ্বিতীয় ধাপে অনার্স প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
ক্যাম্পাসে ফিরে যাতে সুষ্ঠু পরিবেশ পায়, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে গিয়ে সরেজমিনে প্রস্তুতি দেখা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান, ফজলুল হক মুসলিম, সলিমুল্লাহ মুসলিম ও বিজয় একাত্তর, জগন্নাথ হল ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলসহ বেশ কয়েকটি আবাসিক হলে দেখা গেছে সেই প্রস্তুতির চিত্র।
হলগুলোর টয়লেট ও বাথরুমগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। সেই সাথে হল ভবনের দেয়ালে রঙ করা, বাগানে নতুন ফুলগাছ লাগানো ও মাঠের ঘাস কেটে ছোট করা হচ্ছে। প্রত্যেক হলের প্রবেশপথে বসানো হচ্ছে হাত ধোয়ার বেসিন। হলের ডাইনিং রুম, ক্যান্টিন, ক্যাফেটেরিয়া, রিডিং রুমে চলছে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ।
হল খোলার প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও বিজয় একাত্তর হলের অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির বলেন, ছাত্রদের ওয়াশরুম, ক্যান্টিন, হলের প্রবেশপথে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে উপাচার্যের সাধারণ নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী হলগুলোতে প্রস্তুতির কাজ চলছে। যাতে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে একটি সুন্দর পরিবেশ পায়।
হল খোলার তারিখের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটার কোনো তারিখ নির্ধারণ হয়নি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ বা ১৫ অক্টোবরের কথা বলা হচ্ছে। তবে এই তারিখ এগিয়ে আনা বা অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নিতে তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সাথে আলোচনা করবেন বলে জেনেছি।
ক্যাম্পাস খুললে যেভাবে চলবে
এদিকে, ক্যাম্পাস খোলা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা কীভাবে তাদের জীবন অতিবাহিত করবে, সে বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করেছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদের নেতৃত্বে একটি কমিটি এ বিধি প্রণয়ন করেছে। এতে ক্যাম্পাস খোলার পূর্ব পদক্ষেপ, আভ্যন্তরীণভাবে পালনীয় বিষয়াদি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা, যেমন শ্রেণিকক্ষ, গ্রন্থাগার, ল্যাবরেটরি প্রভৃতি কীভাবে চলবে প্রভৃতি বিষয় অন্তুর্ভুক্ত আছে।
এর অন্তভুক্ত বিধিগুলো জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির বলেন, শিক্ষার্থীরা যখন হলে থাকবে, তখন তাকে তিনটি নির্দেশনা মানতে হবে। রুমে কোনোভাবেই ফ্লোরিং করতে পারবে না। কক্ষের বাহিরে আসলে মাস্ক পরিধান করতে হবে। কক্ষের আশেপাশে পরিষ্কার রাখতে হবে। অতিথি অনুমোদিত হবে না।
শিক্ষার্থীরা বাহিরে আসলে হাঁচি-কাশির সময় কনুইয়ের ভাঁজে বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢাকতে হবে। ক্যান্টিন, টিভিরুম বা হলের কোনো জায়গায় গেলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের দুরারোগ্য ব্যধি থাকলে তা আগেই কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তো হলে রাখা যাবে না। সেক্ষেত্রে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র বা শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের অতিথিকক্ষগুলোতে যেতে হবে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সাথে সমন্বয় করে সেখানে সেবা দেওয়া হবে। হল খোলার সাথে সাথে বিষয়গুলো কার্যকর হবে।
গণরুম চায় না ঢাবি
হলের একটি কক্ষে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের থাকার ‘বিভীষিকাময় গণরুম সংস্কৃতি’ থেকে বের হতে চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হল খুলে দিলে অছাত্র ও বহিরাগতদের কোনোভাবেই হলে থাকতে দেওয়া হবে না। সেই সাথে মেধার ভিত্তিতে ফাঁকা হওয়া আসনগুলোতেও বরাদ্দ দেওয়া হবে, যাতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা যায়।
এ বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রাব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে পর্যায়ক্রমে খোলা হচ্ছে, তাতে তাৎক্ষণিকভাবে গণরুম সৃষ্টির কোনো কারণ নেই। গণরুম তো অনেকদিন ধরে গড়ে উঠেছে। এখান থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমরা কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। সকল শিক্ষার্থী ও ছাত্রসংগঠনগুলো সহযোগিতা করলে গণরুমের প্রসঙ্গটি হয়ত আর থাকবে না।
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন