এতদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিলো ঘ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ভর্তি কমিটি’র সভার পর ‘বিভাগ পরিবর্তনের ইউনিট’ হিসেবে পরিচিত এই ইউনিটটি বাতিলের কথা জানানো হয়েছে। তবে, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের অভিযোগ, এ বিষয়ে তাদের মতামত ‘উপেক্ষা’ করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর ডিনস কমিটির বিশেষ সভায় ‘পরীক্ষার বোঝা কমানো’র কারণ দেখিয়ে ঘ-ইউনিট বাতিলের সুপারিশ করা হয়। ওই সভায় শিক্ষার্থীদের ‘উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রমে’র আলোকে ভর্তি পরীক্ষায় মূল্যায়নের কথা বলা হয়। তবে, তাৎক্ষণিকভাবে ‘তড়িঘড়ি করে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো’র বিরোধিতা করেছিলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। এ নিয়ে একই বছরের ৯ নভেম্বর আলোচনায় বসেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকবৃন্দ। সে সময় ঘ-ইউনিট বহাল রাখার পক্ষে অনুষদের ১৬টি বিভাগের পক্ষ থেকেই মতামত দেওয়া হয়। এই মত রেজ্যুলেশন আকারে উপাচার্যের দপ্তরে পাঠানো হয়েছিলো।
তবে ওই বছরের ২৩ নভেম্বর সাধারণ ভর্তি কমিটি সভায় ঘ-ইউনিট বাতিলে ডিনস কমিটি’র সুপারিশই বহাল রাখা হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালেল ১৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিষদে ঘ-ইউনিট বাতিলের সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে তাতে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের মতামত আলোচনাতেই আনা হয়নি। এমনকি ইউনিট বাতিলের মত জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকেও জানানো হয়নি।
২০২০ সালের ৮ নভেম্বর ডিনস কমিটির বিশেষ সভার কথা উল্লেখ করে অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘সভার শেষ দিকে এটা এজেন্ডা হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছিল। তখন আমি বলেছিলাম , এত তাড়াতাড়ি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। আমি বলেছি, অনুষদের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে মতামত জানানো হবে। আমি সভায় ঘ ইউনিট রাখার যৌক্তিকতা তুলে ধরে ছিলাম।’
এ সংক্রান্ত নথিপত্রে তাকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তার। তিনি বলেন, ডিনস কমিটির সভার পর আমরা ‘ফ্যাকাল্টি মিটিং’ করেছি। সেখানে ‘ঘ’ ইউনিট বাতিল না করার জন্য শিক্ষকরা মতামত দেন। কিন্তু ২৩ নভেম্বর ভর্তি কমিটির সভায় যে সিদ্ধান্তের কথা বলা হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। পুরো এডমিশন কমিটির সামনে আমি বলেছি, আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তখন যে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এ কথা আমাদের কাউকে জানানো হয়নি। প্রো-ভিসি (শিক্ষা) তখন গণমাধ্যমে বলেছিলেন ঘ ও চ ইউনিট বাতিল হয়নি, সংস্কার করা হবে। এখন কেন বলা হচ্ছে শুধু চ ইউনিট নিয়ে কোনো কথাই হয়নি, শুধু ঘ ইউনিট বাতিল।
বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বর্তমান ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান। তবে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটি নির্দিষ্ট কোনো অনুষদের বিষয় নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সর্বোত্তম সিদ্ধান্তই সাধারণ ভর্তি কমিটি ও একাডেমিক কাউন্সিল নিয়েছে।’
এদিকে, ঘ-ইউনিট বাতিল হওয়ায় ক্ষোভ জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকেরা। তারা বলছেন, একটি ইউনিট বাতিলের মত সিদ্ধান্ত যথেষ্ট পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে নেওয়া উচিত ছিলো। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আগে শিক্ষার্থীরা দুইবার ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারত। এখন মাত্র একবার! পরের বার ঘ ইউনিটটাও নাই হয়ে গেল! এভাবে শিক্ষার্থীদের সুযোগ সংঙ্কুচিত করার সিদ্ধান্ত কতটা বিবেচনাপ্রসূত?’
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান আল মানজুর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো সিদ্ধান্ত এর অংশীদারদের যুক্ত করে নেওয়া উচিত। তাছাড়া ভর্তি প্রক্রিয়ায় সংস্কার প্রয়োজন হলে তা অবশ্যই যথেষ্ট গবেষণার পরই করা উচিত।’
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা