রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে টিস্যু কালচার পদ্ধতি ব্যবহার করে উন্নত জাতের কলার চারা উদ্ভাবিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যান্ট মলিকুলার বায়োটেকনোলজি ল্যাবে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে এই কলার জাত উদ্ভাবন করেন প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের গবেষকেরা।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. কুদরত-ই খুদা একাডেমিক ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কৃষকদের মাঝে এ উন্নত জাতের চারা বিতরণ করা হয়।
প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক তানজিমা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যে উন্নত জাতের কলা উদ্ভাবন করেছে তা অন্যদেরও উদ্ভাবনী গবেষণায় অনুপ্রাণিত করবে। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে একটি নতুন ধারার সৃষ্টি হচ্ছে। যা প্রতিনিয়ত আমাদের এগিয়ে নিচ্ছে। কেননা দেশে জনসংখ্যা ও ভূমির অনুপাত কমে গেলেও আমরা খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। যা কৃষিক্ষেত্রে এক অনন্য সাফল্য।
গবেষকদের অভিবাদন জানিয়ে উপাচার্য বলেন, মাত্র পাঁচ বছরে গবেষকদের এ অভাবনীয় সাফল্য সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। বিশ্ববিদ্যালয় মানেই জ্ঞান সৃষ্টি এবং বিতরণ কেন্দ্র। আর এই জ্ঞান বিতরণটা যদি মানবকল্যাণে ব্যবহৃত না হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় তার মর্যাদা হারায়। তাই কলাসহ অন্যান্য সকল খাদ্য নিয়ে গবেষণা করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন উপাচার্য।
জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম আনোয়ার হোসেন বিগত পাঁচ বছর ধরে প্ল্যান্ট মলিকুলার বায়োটেকনোলজি ল্যাবে গবেষণা করে কলার কিছু উন্নত জাত আবিষ্কার করেন। এসব জাতের মধ্যে রয়েছে-মেহের সাগর, রঙিলা সাগর, জি৯, শবরি, অগ্নীশ্বর বা লাল কলা। এই জাতের কলার চারা রোপনের ৬-৭ মাসের মধ্যে মোচা বের হয়। ফলে সাধারণ পদ্ধতির চেয়ে কৃষকরা ৩০-৪০ শতাংশ বেশি লাভবান হতে পরবেন।
অনুষ্ঠানে গবেষক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, কলা দেশে সারা বছরই চাষ হয়। তবে সনাতন পদ্ধতিতে কলা উৎপাদন বেশি সময় সাপেক্ষ এবং অলাভজনক। তাই টিস্যু কালচারের মাধ্যমে নতুন জাতের চারা উদ্ভাবন করা হয়েছে। যা অপেক্ষাকৃত কম সময় সাপেক্ষ এবং লাভজনক। ফলে কৃষকেরা অল্প সময়ের মধ্যে এসব কলা চাষাবাদ অধিক লাভবান হওয়ার সুযোগ পাবেন।
তিনি বলেন, লাল জাতের কলার পুষ্টিগুণ সাধারণ কলার চেয়ে অনেক বেশি। বিশেষ করে এতে থাকা বিটা-ক্যারোটিন নামক রঞ্জুক পদার্থ থাকে, যা রাতকানা রোগ ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। তাছাড়া এই কলার বাজার মূল্য বেশি। তাই সহজে এই চারা রোপনের মাধ্যমে কৃষকেরা বেশি লাভবান হতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম ও বিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক শাহেদ জামান। এছাড়া সেখানে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং আমন্ত্রিত কৃষকগণ উপস্থিত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন