সকল জল্পনা-কল্পনা শেষে গুচ্ছভূক্ত ২২টি সাধারণ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে চলতি মাস থেকেই। তবে আগের ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নতুন করে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত হচ্ছে কি না এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি এমনটাই জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
মঙ্গলবার বিকেলে গুচ্ছ ভর্তি কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে মুঠোফোনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
উপাচার্য বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আমরা এই মাসেই গুচ্ছের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করব। সেই সঙ্গে আগামী জুলাইয়ের শুরুর দিকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু করতে চাই। তবে এবার আমরা টেকনিক্যাল বিষয়গুলোর জটিলতা লাঘবের জন্য আগে থেকেই সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
জানা যায়, গত বছর ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। শিক্ষার্থীদের সুবিধার বিষয়ে চিন্তা করে গুচ্ছ কার্যক্রম শুরু হলেও এতে দেখা যায় নানাবিধ ত্রুটি ও অব্যবস্থাপনা। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর। এদিকে নিজস্ব স্বকীয়তা ধরে রাখতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি এ পদ্ধতি থেকে বের হওয়ার জোর দাবি জানিয়েছে।
এদিকে গুচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থাকছে কিনা এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষক সমিতির পক্ষে থেকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছি উপাচার্য এবং শিক্ষামন্ত্রীকে আমরা নিজস্ব ভর্তি প্রক্রিয়ায় ফিরতে চাই। যদিও শিক্ষামন্ত্রী আমাদেরকে একাধিকবার অনুরোধ করেছে গুচ্ছে থাকার জন্য তবে আমরা কোনো সম্মতি দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, শুধু শিক্ষক সমিতি নয় জগন্নাথের বেশিরভাগ শিক্ষক-শিক্ষার্থী চায় না গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকতে। তবে উপাচার্য কেন থাকতে চায় আমরা বিষয়টা বুঝতে পারছি না। আগামী (বুধবার) ১৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে আমরা থাকব কিনা। যদি সিন্ডিকেট সভায় নিজস্ব ভর্তি প্রক্রিয়ায় ফিরতে আপত্তি জানানো হয় তাহলে আমরা শিক্ষক সমিতির সদস্যরা আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিব কারণ আমরা কোনোভাবে গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকতে চাই না। এতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্বতা হারিয়ে মান কমে যাচ্ছে।
ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মন্ত্রী মহোদয়ের মিটিংয়ে আমরা সমস্যার কথা বলেছি। টেকনিক্যাল ত্রুটি ও অগোছালো বিষয়টি সমাধান করতে হবে আগে। নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ফিরতে আমরা উপাচার্যের নিকট চিঠিও দিয়েছি।
অন্যদিকে তৃতীয় বারের মতো গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এ মাসেই নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। এবারে শুরুতে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিমত পোষণ করলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আলোচনা সভায় জোরালো কোন আওয়াজ তোলেনি কেউ। ফলে শিক্ষামন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সম্মিলিত সিদ্ধান্তক্রমে এ মাসেই শুরু হবে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম।
যুক্ত হচ্ছে না নতুন বিশ্ববিদ্যালয়
এবার গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর আবেদন জানিয়েছে পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) নিকট এ আবেদন জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় তিনটির উপাচার্য। তবে ইউজিসি থেকে নতুন তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাজেট জটিলতা ও অবকাঠামো হীনতার কারণে এ বছর নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম শুরু হবে না বলে জানিয়েছেন ইউজিসি সদস্য ড. দিল আফরোজা। তিনি আরো বলেন, গুচ্ছের সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা চলছে। কোনো জটিলতা ছাড়া একটি সুন্দর প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা হবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে গুচ্ছ কার্যক্রম সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল