মাত্র তিনদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। শেষ মুহূর্তে বগুড়ায় জমজমাট কোরবানির পশুর হাট। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগমে মুখরিত হাটগুলো। এসব হাটে বিক্রি হচ্ছে গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষসহ বিভিন্ন কোরবানিযোগ্য পশু। তবে এ বছর হাটে গরুর আমদানি বেড়েছে। বড় গরু থাকলেও ছোট গরুর চাহিদা অনেক। চাহিদা অনুযায়ী ছোট গরুর দামও তুলনামূলক বেশি।
খামারিরা বলছেন, খাবারের দাম ও অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়ায় গরু-ছাগলের দামও এবার বেশি।
জানা গেছে, কোরবানির পশু কেনা-বেচা করতে বগুড়ার বিভিন্ন হাটে ভিড় করছেন ক্রেতারা-বিক্রেতারা। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, বেচা-কেনা ততই বাড়ছে। ব্যবসায়ী ও খামারিরা দেশি-বিদেশিসহ ছোট-বড় গরু-ছাগল হাটে তুলছেন। ক্রেতারা যার যার পছন্দ অনুযায়ী কোরবানির পশু কিনছেন। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে বলছেন খাবার ও ওধুধের দাম বাড়ার কারণে গত বছরের তুলনায় এবার তুলনামূলক দাম বেশি।
জেলার অন্যতম পশুর হাট মহাস্থান হাট, ধাপের হাট, সুলতানগঞ্জ হাটসহ অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী হাটগুলোতে কোরবানির মৌসুমে বেচাকেনা হয় কয়েক’শ কোটি টাকার পশু। প্রতিবারের মতো এবারও হাটগুলোতে বিক্রি হচ্ছে পশু।
বগুড়ার মহাস্থান হাট ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহে দুইদিন এখানে গরুর হাট বসে। এই হাটে প্রতিবছর উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু ছাগল নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। জেলার অন্যান্য হাটের চেয়ে এই হাটে গরুর আমদানি বেশি বলে ক্রেতারাও ছোটে এই হাটে। দুপুর গড়াতেই ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে মহাস্থান হাটে। ক্রেতারা হাটজুড়ে ঘুরে ঘুরে পছন্দের গরু ও ছাগল নির্বাচন করেন। পছন্দ হলে শুরু হয় দরদাম কষাকষি। তবে কোরবানির পশুর মধ্যে গরুর আমদানি ভালো হলেও ছাগলের সংখ্যা কম ছিল।
গত বছর যে গরুর দাম এক লাখ টাকা ছিল, এ বছর সেই গরুর দাম এক লাখ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোমবার শহরতলীর বনানী হাটেও গরু-ছাগল ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে শহরের লোকজন এই হাট থেকে বেশি কোরবানির পশু কিনে থাকেন। শহরের কাছাকাছি এবং গাড়ি ভাড়া কম হওয়ায় অনেক ক্রেতাই এই হাটে ভিড় করেন। এছাড়াও দুপচাঁচিয়া ধাপের হাট, গাবতলীর নাড়ুয়ামালা ও পেরীহাট, দুবলাগাড়ি হাটসহ অন্যান্য পশুর হাটগুলোতে প্রচুর গরু-ছাগল উঠছে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে মালা পরিয়ে সাজানো হয়েছে বড় বড় ষাড় গরু। হাটগুলোতে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা মূল্যের গরু দেখা গেছে।
বগুড়া শহরতলীর বনানী হাটে গরু বিক্রি করতে আসা আবু বক্কর জানান, পশু খাদ্যর দাম বেড়েছে। খড়ের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। গো খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে গরুর দাম বেড়েছে।
এই হাটে গরু কিনতে আসা রাজু আহম্মেদ জানান, বনানী হাটে সব ধরনের গরু-ছাগল উঠেছে। তবে গত বছর কোরবানি হাটের চাইতে এবছর গরুর দাম বেশি মনে হচ্ছে।
এদিকে চলতি বছর জেলায় ৫১ হাজার ১৪৬ জন খামারি কোরবানির জন্য তাদের পশু প্রস্তুত করেছেন। গত বছরের তুলনায় ২ হাজার ৬৯৩ জন খামারি বেশি হয়েছে। গত বছর জেলায় খামারির সংখ্যা ছিল ৪৮ হাজার ৪৫৩ জন। আর কোরবানির পশু ছিল ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৫টি। এবার হয়েছে ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৮৪২টি পশু। গত বছরের তুলনায় এবার পশু বেশি প্রস্তুত আছে ১২ হাজার ৪২৭টি। চলতি বছর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯ হাজার ১০টি। আগের বছর পশুর চাহিদা ছিল ৭ লাখ ৫ হাজার ২৬০টি। গত বছরের তুলনায় ৩ হাজার ৮৫০টি কোরবানির পশু বেশি রয়েছে। বগুড়ায় এবার চাহিদার তুলনায় কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে ৩৮ হাজার ৪৩২টি।
বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোছা. নাছরীন পারভীন জানান, জেলায় এবছর কোরবানির পশুর চাহিদার তুলনায় প্রস্তুতকৃত পশুর সংখ্যা বেশি। খামারিও বেড়েছে। খামারিরা দেশীয়জাতের পশু লালন পালন করেছেন বেশি। হাটে হাটে এখন পশু কেনাবেচা চলছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে প্রতিটি হাটে একটি করে মেডিকেল টিম রয়েছে তদারকি করার জন্য। এছাড়া কোরবানির হাটে যেসব গাভী এবং ছাগল কেনা-বেচা হচ্ছে, সেগুলো গর্ভবতী কিনা, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই