সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আবেদনের স্তুপ জমা পড়েছে। মাত্র এক মাসে ২২২৫টি তালাকের আবেদন জমা হয়েছে নগরভবনে। সিসিক কর্তৃপক্ষ এই ভয়াবহ তথ্যটি জানিয়েছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে গতকাল শনিবার দুপুরে নগরভবনের সম্মেলনকক্ষে সিলেটের সকল সামাজিক, রাজনৈতিক, পেশাজীবি সংগঠন, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত পরামর্শসভায় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘মাত্র এক মাসে (গত সেপ্টেম্বরে) আমাদের কাছে ২২২৫টি বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন এসেছে। যা সামাজিক অস্থিরতার ভয়াবহ এক রূপ।’
সিসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত- এই ৯ বছরে সিটি কর্পোরেশন এলাকার ১৪৩৯টি বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন পড়ে। এর মধ্যে ৮৮১ জন নারী এবং ৫৫৮ জন পুরুষ বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন। ২০১৯ সালের হিসেব অনুযায়ী সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রতি মাসে গড়ে ২৪টি বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন পড়ছে।
আর শনিবারে দেয়া সিসিক মেয়রের তথ্য অনুযায়ী- এ বছরের শুধু সেপ্টেম্বর মাসে সিসিক এলাকার ২২২৫ জন নারী-পুরুষ বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেছন। এর আগে ২০১৮ সালে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন পড়ে ২৫৫টি। এর মধ্যে মহিলা ১৭১ এবং পুরুষ ৮৪। ওই বছর ২৯টি বিচ্ছেদ কার্যকর হয়।
২০১৮ ও ২০১৯ সালের তুলানায় করোনার বছর খ্যাত ২০২০ সালে সিলেট মহানগরীতে বিবাহ বিচ্ছেদ আবেদনের যেন হিড়িক পড়েছে বলে মন্তব্য সুশীলদের।
সিসিক সূত্র জানায়, জমা পড়া আবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে- স্বামী কিংবা স্ত্রীর প্রবাসে অবস্থানের কারণে দীর্ঘদিন পরস্পর দূরে থাকা, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, সন্দেহ, যৌতুক দাবি, সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার, স্বামী-স্ত্রীর জীবন-যাপনে অমিল, সন্তান-সন্তানাদি না হওয়া, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা এবং মাদকে আসক্তি ইত্যাদি কারণে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। মিল না হওয়ায় অনেক উচ্চশিক্ষিত দম্পতিও বিচ্ছেদের আবেদনের তালিকায় রয়েছেন।
জানা গেছে, সিসিকে বিচ্ছেদের আবেদন পাওয়ার পর দুই পক্ষকে প্রতি মাসে শুনানির জন্য ডাকা হয়। কিন্তু, দু’পক্ষের লোকজনকে শুনানিতে হাজির করা যায় না। এ কারণে অনেক সময় বাধ্য হয়ে তাদেরকে একতরফা শুনানি করতে হয়।
সিলেটে বিবাহ বিচ্ছেদ ভয়াবহ আকার ধারণ করার পেছনে কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হলো- মানুষের মাঝে নৈতিকতার স্খলন। এছাড়াও আধুনিক লাইফ স্টাইল এবং অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতা বিবাহ বিচ্ছেদের বড় দুটি কারণ।
সমাজ বিশ্লেষকরা বলেন, নানা কারণে মানুষের সহিষ্ণুতা কমে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে নেমে আসছে হতাশা। শিক্ষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীদের কর্তৃত্ব বাড়ছে। যুক্তরাজ্যে অনেক বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। যুক্তরাজ্যের সাথে সিলেটি মানুষের বেশি সংশ্লিষ্টতার কারণে সিলেটেও এর প্রভাব পড়ছে।
তারা বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ রোধে পারিবারিকভাবে নৈতিক শিক্ষা বিস্তারের ওপর জোর দিতে হবে। কারিকুলামে নৈতিক শিক্ষার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
এদিকে ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা বলছেন, আমরা এখন অতি মাত্রায় ধর্মবিমুখ, ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছি। আর এতে সামাজিক অবক্ষয় হচ্ছে দ্রুত গতিতে। প্রযুক্তির অপব্যবহার, বিদেশি চ্যানেলের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া, ধর্মীয় মুল্যবোধ কমে যাওয়া, পারস্পরিক সমঝোতা এবং শ্রদ্ধাবোধের অভাব বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক