১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৯:৩৩

নিজের কিডনি দিয়ে ভাইয়ের জীবন বাঁচালেন ছয়ফুল হোসেন

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

নিজের কিডনি দিয়ে ভাইয়ের জীবন বাঁচালেন ছয়ফুল হোসেন

বদরুল হোসেন (বামে), ছয়ফুল হোসেন (ডানে)। সংগৃহীত ছবি

ভাইকে বাঁচাতে নিজের কিডনি দিচ্ছেন ভাই কিংবা বোন- এমন দৃশ্য সিনেমাতে হরহামেশাই দেখা যায়। তবে বাস্তবে এমন ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজারের বড়লেখায়। নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করেই বড় ভাইকে একটি কিডনি দিয়েছেন ছয়ফুল হোসেন (২৮) নামের এক যুবক। এতে ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসার বিরল এক দৃষ্টান্ত গড়ে প্রসংশায় ভাসছেন তিনি। ছোট ভাইয়ের দেওয়া কিডনি পেয়ে নতুন জীবন পেয়েছেন বড়ভাই বদরুল হোসেন (৩৩)।

শুক্রবার ঢাকার শ্যামলীর সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে ছয়ফুল হোসেনের দেওয়া কিডনি বদরুল হোসেনের দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন চিকিৎসকরা। বর্তমানে তারা দুজনেই সুস্থ আছেন। তারা দুজন বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর (কাঠালতলী) ইউনিয়নের দক্ষিণ মুছেগুল গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে। 

এদিকে বদরুলের চিকিৎসার ব্যয়ভার সংগ্রহের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে শিক্ষা ও সেবা ফাউন্ডেশন কাঠালতলী। মাত্র দেড়মাসে বদরুলের চিকিৎসার জন্য তহবিল গঠন করে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করে সংগঠনটি। এর মধ্যে প্রায় ২৭ লাখ টাকা বদরুলের চিকিৎসার পেছনে ব্যয় হয়েছে।

জানা গেছে, বদরুল হোসেন প্রায় ৮ বছর ধরে সংযুক্ত আরব-আমিরাতে ছিলেন। সেখানে তিনি একটি দোকানে স্যালসম্যান হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৯ সালে ৩০ ডিসেম্বর হঠাৎ বদরুলের শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। পরে তিনি চিকিৎসকের কাছে গেলে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে জানান তার দুটি কিডনি একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর ২০২০ সালের ০২ জানুয়ারি বদরুল দেশে ফেরে আসেন। দেশে ফেরে চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকার শ্যামলীর সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে তার কিডনি ডায়ালাইসিস শুরু হয়। এতেও বদরুলের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। এসময় চিকিৎসকরা তাকে জানান বাঁচতে হলে অন্তত একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ২৫ লাখ টাকা। এরই মধ্যে বদরুলে চিকিৎসার পেছনে সহায়-সম্বল যা ছিল তা ব্যয় করে অনেকটা নিঃস্ব হয়ে পড়ে তার পরিবার।

এই অবস্থায় বদরুল ও তার পরিবারে যেন অন্ধকার নেমে আসে। কারণ, একদিকে ২৫ লাখ টাকা অন্যদিকে একটি কিডনি কে দেবে বদরুলকে! এই অবস্থায় নিজের জীবনের কথা না ভেবে বড় ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসেন বদরুলের ছোটভাই ছয়ফুল হোসেন। তিনি নিজের একটি কিডনি বদরুলকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বদরুলের কিডনি সাথে ছয়ফুলের কিডনি মিলে যায়। এদিকে বদরুলের চিকিৎসার জন্য অনেকটা আলো হয়ে পাশে দাঁড়ায় শিক্ষা ও সেবা ফাউন্ডেশন কাঠালতলী। তারা তার চিকিৎসার জন্য তহবিল গঠন করে অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন। পাশাপাশি চলে ফেসবুকে প্রচারণা। হাত বাড়িয়ে দেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি-সংগঠন। ফলে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে চিকিৎসার জন্য প্রায় ৩৫ লাখ টাকা সংগ্রহ হয়।

২০২০ সালের জুলাই মাসে বদরুলের দেহে কিডনি প্রতিস্থাপনের কথা থাকলেও তা আর হয়ে ওঠেনি। কারণ এর মধ্যে বদরুলের শরীরে বাসা বাঁধে প্রাণঘাতী হেপাটাইটিস-সি ও যক্ষ্মা রোগ। এদিকে প্রায় ১৪ মাস পর সুস্থ হয়ে ওঠেন বদরুল। এরপর গত শুক্রবার ঢাকার শ্যামলীর সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ছয়ফুল হোসেনের দেওয়া কিডনি বদরুল হোসেনের দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়।

বদরুল ও ছয়ফুলের বড়ভাই শিক্ষক মিলাদ হোসেন শনিবার বিকেলে বলেন, আমার ছোট ভাই ছয়ফুলের দেওয়া কিডনি বদরুলের দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেছেন চিকিৎসকরা। তারা দুজনেই এখন সুস্থ রয়েছেন। তিনি বদরুলের পাশে দাঁড়ানোর জন্য শিক্ষা ও সেবা ফাউন্ডেশন কাঠালতলী'র পাশাপাশি সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

শিক্ষা ও সেবা ফাউন্ডেশন কাঠালতলী’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছয়ফুল হক শনিবার বিকালে বলেন, বদরুলের চিকিৎসার জন্য প্রথমে ২৫ লাখ টাকার প্রয়োজন ছিল। আমরা তার চিকিৎসার্থে তহবিল গঠন করে টাকা সংগ্রহ শুরু করি। দেড়মাসে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা তহিবেল জমা হয়। বদরুল কয়েক মাস অসুস্থ থাকায় কিডনি প্রতিস্থাপন করতে দেরি হয়েছে। তার চিকিৎসায় প্রায় ২৭ লাখ টাকা খরছ হয়েছে। আর তার ছোটভাই ছয়ফুল তাকে একটি কিডনি দিয়েছেন। ছয়ফুল তার ভাই বদরুলকে কিডনি দিয়ে ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর