বৃহত্তর সিলেটে ভয়াবহ বন্যার কারণ হিসেবে আওয়ামী সরকারের অপরকল্পিত উন্নয়নকে দায়ী করছে সিলেট জেলা বিএনপি। পাশাপাশি বন্যার ভয়াবহতা অস্বীকার করে বন্যার্তদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতাদের উপহাস করার অভিযোগও করছেন জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। এছাড়া চলমান দুর্যোগের সময় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে সরকারের আড়ম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন করাকেও বন্যাকবলিত সিলেটের সঙ্গে রসিকতার নামান্তর বলে উল্লেখ করছেন তারা।
বুধবার দুপুরে সিলেট নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সাংবাদিকদের সামনে এসব বক্তব্য তুলে ধরেন জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি বলেন, সিলেটের মানুষ যখন অসহায় হয়ে কান্না করছেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন পানি ডিঙ্গিয়ে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন, ঠিক তখন দেশের সবচেয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তি বন্যায় বিএনপির কর্মতৎপরতা নিয়ে ঠাট্টা করছেন। অথচ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে সিলেট জেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযােগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে বন্যার শুরু থেকেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের বানবাসিদের দ্বারে দ্বারে আমরা যাচ্ছি, সাধ্যমতো ত্ৰাণ, নগদ অর্থ এবং তৈরি করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করছি।
কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে আমাদের সাথে সার্বক্ষণিক যােগাযােগ রাখছেন। আমরা মঙ্গলবার পর্যন্ত সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলায় ৩৬ হাজার ২ শত পরিবারকে ত্রাণ ও শুকনাে খাবার, ১ লাখ ৯৩ হাজার জনকে তৈরি করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি এবং ১১ হাজার ৩ শত পরিবারকে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি। এই পরিমাণ সময়ে সময়ে আরও বাড়বে। তারপরও যখন প্রধানমন্ত্রী বিএনপির এসব কার্যক্রম দেখতে পান না তখন তা দেখার দায়িত্ব সিলেটবাসীসহ দেশবাসীর কাছে ছেড়ে দিলাম।
‘সিলেটের বন্যা প্রাকৃতিক নয়- মানবসৃষ্ট’ উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশােরগঞ্জ জেলায় বন্যার মূল কারণ রাষ্ট্রপতির বাড়িতে যাতায়াতের জন্য হাওরের বুক চিরে ৪৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ৭৭ কিলােমিটার রাস্তা। এরমধ্যে হাওরাঞ্চলে রয়েছে ৩০ কিলােমিটার বাঁধ। শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির সুবিধার জন্যই পানিতে হাবুডুবু খেতে হচ্ছে দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের এই বিশাল জনগােষ্ঠীকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশােরগঞ্জ-নেত্রকোনা থেকে শুরু করে সিলেট (সুরমা) বেসিন বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ প্লাবনভূমি। এই ভূমি দিয়ে পূর্ব ভারতের নদী ও বৃষ্টির পানি নেমে আসে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বাড়িতে যাতায়াতের জন্য নির্মিত এই সড়কের কারণে ঢলের পানি হাওর থেকে নদীতে নামতে পারে না। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, হাওরের বৈশিষ্ট্য হলাে, জলের অবাধ প্রবাহ। কিন্তু ভুল সড়ক, ভুল বাঁধ আর অবকাঠামাে নির্মাণের প্রতিক্রিয়ায় পানি নামতে পারছে না বলে সহনশীল বন্যা দুঃসহ হয়ে উঠেছে। আর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়েছে উজানে ভারতের তৈরি অজস্র বাঁধ-জলাধার, অজস্র ব্যারাজ, জলবিদ্যুৎকেন্দ্র ও অলকাঠামাে। এসবের কারণে নদী আর পলি বইতে পারছে না। পলি বইতে না পারলে পানিও বওয়া কঠিন হয় নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায়। ফলে নদী পানি উগরে দিচ্ছে, অস্বাভাবিক বন্যা হচ্ছে। অবস্থা হয়েছে এমন, ভারতের উজানে বন্যা ১০ দিন চললে বাংলাদেশে চলে মাসের বেশি দিন। এখন সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, বন্যার পানি নামাতে প্রয়ােজনে সড়ক কেটে দিন। কাটবেনই যদি তবে বানিয়েছিলেন কেন? বানালেনই যদি তবে ঘন ঘন কালভার্ট করেননি কেন?
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপি বন্যা থেকে সিলেটের চিরস্থায়ী মুক্তি পাওয়ার জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, দুর্গতদের দীর্ঘমেয়াদী খাদ্য সহায়তা প্রদানপূর্বক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, বন্যার কারণ খুঁজে বের করে নদী ড্রেজিংসহ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি দাবি জানায়। এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও তার দল আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে ‘চোখ থেকে রঙ্গিন চশমা এবং কানের তালা খুলে’ জনগণের দুঃখ-দুর্দশা ‘উপলব্ধি’র পরামর্শ দেয় জেলা বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভােকেট এমরান আহমদ চৌধুরীসহ অন্যান্য নেতা উপস্থিত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত