চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি সহানুভূতি ও মানবিকতার সাথে বিবেচনা করার জন্য চা বাগান মালিকদের অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি।
তিনি বলেন, সিলেট অঞ্চলে কাজ করা চা শ্রমিকরা অনেক দরিদ্র এবং অসহায়। তারা মজুরি বৃদ্ধির জন্য দাবি জানাচ্ছেন। চা বাগানের মালিকদের অনুরোধ করেছি, আপনাদের চা শিল্পে যারা কাজ করে তাদের মজুরি সহানুভূতি ও মানবিকতার সাথে বিবেচনা করুন। যতটুকু পারন আপনারা তাদের সাথে বসে ঠিক করুন।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় দক্ষিণ ময়ূরকুঞ্জ কমিউনিটি সেন্টারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হানিফ বলেন, আমি খুব হতাশ হয়েছি চা বাগানের শ্রমিকরা এখনো কাজে যোগ দেননি। আমি মনে করি মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি সহানুভূতি ও মানবিকাতর সাথে বিবেচনা করলে শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজে যোগ দেবে এবং কাজ করে শিল্পকে অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগ মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছি। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আমরা সবাইকে নিয়ে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে চাই। তাই দুঃখ-দুর্দশায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।
সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সংসদ নির্বাচন হবে। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করতে হলে সুশৃঙ্খল কর্মী বাহিনী প্রয়োজন। সেজন্য সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
আওয়ামী লীগের শেকড় বাংলার মাটির অনেক গভীরে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা রাজপথে লড়াইয়ের হুমকি দিচ্ছেন তাদের বলতে চাই পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে এ দলের জন্ম হয়েছে। জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ লড়াই-সংগ্রাম করে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে। যারা আওয়ামী লীগকে হুমকি দিয়ে ফায়দা লুটতে চাচ্ছেন তাদের বলতে চাই, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশের রাজনীতির ময়দানে আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করার কোনো শক্তি নেই।
তিনি বলেন, হুমকি-ধামকি পরিহার করে যদি ভাবেন জনপ্রিয়তা আছে তাহলে নির্বাচনে আসার প্রস্তুতি নিন। নির্বাচনে প্রমাণ হবে কতটুকু জনপ্রিয়তা আছে। আমরা যেকোনো অপশক্তির অপতৎপরতা মোকাবেলা করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখবো।
জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগকে ভেঙে টুকরো টুকরো করার চেষ্টা করেছেন এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, লাখ লাখ নেতাকর্মীকে নির্যাতন করা হয়েছে। জিয়ার উত্তরসূরীরা ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর একাত্তরের কায়দায় আবারো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এমএম এস কিবরিয়া ও আহসানুল্লাহ মাস্টারসহ ২৬ হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে।
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান পাকিস্তানের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন এমনটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, একাত্তরে যেভাবে পাকিস্তানিরা গণহত্যা চালিয়েছে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা ও তার পুত্র তারেক রহমান হাওয়া ভবন বানিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ২১ আগস্ট গণহত্যা চালিয়েছে। তারা যতদিন বাংলাদেশে রাজনীতিতে থাকবে ততদিন সংঘাত-সংঘর্ষ থাকবে। তারা রাজনীতির ভাষা ও শিষ্টাচার জানে না। এরা হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি করে। তাদের লক্ষ্য হত্যা ও সন্ত্রাস করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা।
দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করে রাখতে হবে। আর না হলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শান্তির পরিবেশ রাখা দুরূহ হবে।
আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান ও সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় দক্ষিণ সুরমা উপজেলা এবং অন্তর্গত ইউনিয়ন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক