চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নগরের সৌন্দর্য বর্ধনে ৫৬ কোটি টাকা ব্যায়ে নান্দনিক নানা স্থাপনা নির্মাণ করে। বসানো হয়েছিল আধুনিক ফোয়ারা, ভাস্কর্য, ম্যুরাল, বাঘ ও দৃষ্টি নন্দন সবুজ বৃক্ষ। কিন্তু রক্ষাণা বেক্ষণ, পরিচর্যা ও প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবে ধুলোয় ধুসর ও মলিন হয়েছে নান্দনিক স্থাপনাগুলো।
চসিক সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে চট্টগ্রাম ভ্যেনুতে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠানের পূর্বে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বিদেশিদের কাছে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের ঐতিহ্যগত সৌন্দর্য্য তুলে ধরতে ৫৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করে। ২০১৪ সালে মন্ত্রণালয় একই কাজে আরো পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। ওই প্রকল্পের অধীনে নগরের গুরত্বপূর্ণ সড়ক-মোড়গুলোতে বসানো হয় রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বিমানের ভাস্কর্য, ঘোড়সওয়ার, ক্রিকেটারের ভাস্কর্য, ম্যুরালসহ রোপনকরা হয় সবুজ গাছপালা। এসব বর্ণিল স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যায় কেনা হয় রাস্তার ধুলো সুইপিং গাড়ি। ভাস্কর্য এবং সবুজ সৌন্দর্য ধরে রাখতে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার পরিচর্যা ও ডিভাইডারের গাছ পানি দিয়ে পরিচর্যা করার কথা থাকলেও তা যথাযথ বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে ডিভাইডারের সবুজ বৃক্ষ হয়ে গেছে ফ্যাকাশে, মরে গেছে কোন কোন বৃক্ষ। বাঘের গায়ে জমেছে বালি। ভেঙে গেছে ক্রিকেটারের ভাস্কর্যের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। বিমানের উপর পড়েছে ধুলাবালির আস্তরণ।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামশুদ্দোহা বলেন, ‘সড়কের ধুলোবালি পরিস্কারের জন্য আমাদের দু'ইটি সুইপিং গাড়ি আছে। প্রতিটি গাড়িতে সামনে পিছনে দুইটি ইঞ্জিন। এগুলো ডিজেল দিয়ে চালিত হওয়ায় খরচও দ্বিগুণ। গাড়িগুলো উন্নত দেশের নিরিখে তৈরি হওয়ায় আমাদের ধুলোবালির দেশে পরিচালনা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এছাড়া নগরীর সৌন্দর্য্যবর্ধন খাতে চসিকের পৃথক কোন বড় বাজেটও নেই। তাই নিয়মিত ব্যবহার হচ্ছে না গাড়িগুলো। ফলে নান্দনিক স্থাপনাগুলোর পরিচর্যা কিছুটা ব্যাহ্যত হচ্ছে। তবে চসিকের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নিয়মিত রোড বিভাইডারের বৃক্ষ, ম্যুরাল ও ভাস্কর্যগুলোর পরিচর্যা করে থাকে।’
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নগরের লালখানবাজার টাইগারপাস এলাকায় স্থাপিত দেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ভাস্কর্য ধুলো পড়ে বিবর্ণ। ডিভাইডারের ওপর লাগানো গাছগুলোতে পড়েছে ধুলো-ময়লার আস্তরণ। ওয়াসা মোড়ের ঘোড় সওয়ার এর চিত্র ভেঙ্গে গেছে একাংশ। নিমতলা মোড়ে স্থাপিত ক্রিকেটারদের ভাস্কর্যগুলোও বিবর্ণ। ধুসর হয়ে পড়েছে বন্দর মোড়ের ফোয়ারা।
অভিযোগ আছে, নগরের সেবা সংস্থাগুলোর উন্নয়ন কাজ হচ্ছে সমন্বয়হীন ভাবে। বছর জুড়েই চলে খোঁড়াখুড়ির প্রতিযোগিতা। টিএন্ডটি শেষ করলে কাটাকাটি শুরু করে ওয়াসা। ওয়াসা শেষ করলে খুড়ে কর্ণফুলি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশান কোম্পানি লিমিটেড। এর সঙ্গে আছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ। ফলে খোঁড়াখুঁড়ির যন্ত্রণায় অস্থির নগরবাসী। এ সময় ধুলোবালিতে নান্দনিক স্থপনাগুলো হয়ে পড়ছে ধুসর।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার