পূর্বাঞ্চল রেলপথে ইঞ্জিন বিকলের কারণে প্রতিনিয়ত বিঘ্নিত হচ্ছে ট্রেন চলাচল। ইঞ্জিন বিকল ও লোকালসসহ অন্যান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গত দেড় মাসে আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল ট্রেনসহ বিভিন্ন ট্রেন ৪৪ বার ইঞ্জিন বিকলের মতো ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় চলাচলরত ট্রেনের সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষের পাশাপাশি সময়ানুবর্তিতা বিঘ্নিত ও রেলওয়ের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ইঞ্জিন বিকলের কারণে ১ ঘন্টা থেকে ৪ ঘন্টা পর্যন্ত বিলম্ব হয়েছে ট্রেন চলাচলে। তবে ট্রেন চলাচল নিশ্চিত করণার্থে ত্রুটি বিচ্যুতি দূরীকরণসহ এ ধরণের ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (সিএমই) বরাবরে চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (সিওপিএস) দপ্তর থেকে একটি চিঠিও দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ১০টি ইঞ্জিন আনতে চুক্তি সইও করেছে রেলওয়ে প্রশাসন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এতে গত দেড় মাসে ( ১ এপ্রিল-১৩ মে পর্যন্ত) পূর্বাঞ্চলে আন্তঃনগরসহ চলাচলরত বিভিন্ন ট্রেনে ছোট-বড় ৪৪ বার ইঞ্জিন ত্রুটির ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে সোনার বাংলা এক্সপ্রেসসহ আন্তঃনগর ট্রেনে ১৪ বার, মেইল ট্রেনে ২৪ বার, লোকাল ও অন্যান্য ট্রেন ৩ বার, এবং গুডস ট্রেনে ৩ বার ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘটে। এসব কারণে ট্রেন চলাচলে অস্বাভাবিক বিলম্বে ট্রেন চলাচল করছে। আন্তঃনগর ট্রেন, মেইল ও লোকাল ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হয়েছে এমন আপ-ডাউন ট্রেন গুলোর মধ্যে রয়েছে সোনার বাংলা, বিজয় এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ, অগ্নিবীনা, যমুনা এক্সপ্রেস, কাকলী এক্সপ্রেস, এগার সিন্ধু, কিশোরগঞ্জ ট্রেন, মেইল ট্রেনের মধ্যে নাজিরহাট কমিউটার, ময়মনসিংহ ট্রেন, তিতাস ট্রেন অন্যতম। প্রতিটি ট্রেনেই এক থেকে চার ঘন্টা পর্যন্ত বিলম্বে ট্রেন চলাচল করে। তবে এসব ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা চট্টগ্রাম বিভাগের চেয়ে বেশী ঘটেছে ঢাকা বিভাগে।
আজম নামের সোনার বাংলার একজন ট্রেন যাত্রী বলেন, ট্রেনই হচ্ছে নিরাপদ বাহন। এ ট্রেনে ভ্রমন করতে যাত্রীদের আগ্রহ অনেক বেশী। তবে প্রায় সময় ইঞ্জিন সমস্যার কারণে ট্রেন গন্তব্যস্থলে পৌছতে একটু সময় লেগে যায়। এসব সমস্যাগুলো চিহ্টিনত করে দ্রুত সমাধান করলে ট্রেন ভ্রমনে যাত্রীরা আরো উৎসাহী হবে বলে জানান তিনি।
আশরাফ নামের বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের আরেক যাত্রী বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিজয় ট্রেনে গন্তব্যস্থলে কোন সময় যেতে পারিনি। প্রায় সময় দেখা যায়, ইঞ্জিন বিকলসহ নানাবিধ সমস্যা।
নতুন ইঞ্জিন আনার বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মোঃ শামসুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যেসব ইঞ্জিন আনার জন্য চুক্তি করা হয়েছে সেগুলো চলাচলরত ইঞ্জিনের চেয়ে অধিক উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ইঞ্জিন। যেসব ইঞ্জিন আসবে, সেগুলো দিয়ে এটা ট্রেনে আরো বেশী লোড নেয়া যাবে। যাত্রীদের সুবিধার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে ইঞ্জিনগুলো দেশে আনা হবে। শনিবার ১০টি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ইঞ্জিন আনতে চুক্তি সইও করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
পূর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (সিএমই) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ইঞ্জিন বিকলের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। হঠাৎ ইঞ্জিন ফেল হতে পারে। তাছাড়া এসব সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করছি আমরা। তবে আগের তুলনায় অনেক সময়ানুবর্তিতা বেড়েছে। চেষ্টা চলছে নানাবিধ সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য।
রেলওয়ে ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ রেলওয়ে লোকোমোটিভ সংকটে ভুগছে। চলাচলরত অধিকাংশ ইঞ্জিনই হচ্ছে মেয়াদ উত্তীর্ণ। এসব চলাচলরত মেয়াদ উত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেনগুলো চলছে নানাবিধ ঝুঁকির মধ্যে। প্রতিনিয়ত ইঞ্জিন বিকল ও লোকোলসসহ নানাবিধ ক্রটির কারণে ট্রেন চলাচলেও বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব কারণে রেলওয়ের ভাবমুর্তি ক্ষুন্নসহ যাত্রীদের মধ্যে চলছে নানাবিধ অসন্তোষও। তাছাড়া লোকোমোটিভ ঠেকাতে বাংলাদেশ রেলওয়েতে আসছে ১০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন। আগামী ২ বছরের মধ্যেই এ ইঞ্জিনগুলো সরবরাহ করা হবে। গত বৃহস্পতিবার রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপির উপস্থিতিতেই এসব চুক্তি স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মোঃ শাসসুজ্জামান এবং নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান কোরিয়ার হুন্দই রোটেমের পরিচালক (গ্লোবাল রেল) কোয়াং কুন উন। ১০টি ইঞ্জিনের দাম পড়েছে বাংলাদেশী টাকায় চুক্তি মূল্য ২৯৭ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার ৫৬০ টাকা। বর্তমানে সারা দেশে ২৭০ টি কোচ রেলবহরে চলছে। এছাড়া ২৫০টি কোচ নির্মাণাধীন অবস্থায় আছে। ১৫০ টি কোচ কোরিয়ান সরকারের অর্থায়নে কেনার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ই-জাহান