রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সিপাহী-১৮৫ পদের নিয়োগের ফলাফল ঘোষনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম, ঢাকা ও রাজশাহীতে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। একই সাথে সিপাহী পদে চাকুরী হওয়া এবং চাকুরী বঞ্চিত ব্যক্তি ও স্বজনদের যেমনি খুশী, ঠিক তেমনি হতাশা ও চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে রেল অঙ্গনে অনেকের মাঝে।
বুধবার সকালে ঘোষিত সিপাহী নিয়োগের ফলাফল দেখার দৃশ্য চট্টগ্রামের সিআরবিতে সরেজমিনে দেখা যায়। এসময় সিপাহী পদে চাকুরী প্রত্যাশী ও স্বজনরা মন্তব্য করেন, শত যোগ্যতা থাকলে টাকা না দিলে চাকুরী হয় না। আবার যোগ্যতা নেই টাকা এবং লাইন (চ্যানেল) থাকলেও ঘরে বসে চাকুরী হবে এ ফলাফলেই তার প্রমাণ।
সরেজমিনে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সিপাহী নিয়োগের অনেক অনিয়মের চিত্রসহ নানাবিধ তথ্য অকপটে রেল অঙ্গনসহ বিভিন্ন স্থানে বলছেন হতাশাগ্রস্ত চাকুরী প্রত্যাশীরা। এসবের মধ্যে সিপাহী নিয়োগে কোটা বিভাজনে অনিয়ম, যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্বেও নেয়া হয়নি, নিয়োগ কমিটির আহবায়কের বাসা ঘেরাও, জেলা কোটায় অনিয়ম, টাকা নিয়ে চাকুরী না দেয়া, টাকার বিনিময়ে পছন্দের প্রার্থীদের চাকুরী দিতে জিএম-আহবায়কের গোপন বৈঠক, টাকার বিনিময়ে অনেক বিএনপি-জামায়াত সর্মথিত লোকও চাকুরী পেয়েছেন, নেয়ার ভিডিও ও অডিও রেকর্ড আছে এমন আলোচনায় তোলপাড় হচ্ছে রেল অঙ্গনে।
এসব বিষয়সহ আলোচিত সিপাহী নিয়োগ ও আরএনবি'র নানাবিধ বিষয়ে দুদক, গোয়েন্দা সংস্থা এবং রেলের উধর্তন কর্মকর্তাদের পৃথক তদন্ত কমিটি করলে এ নিয়োগের আসল রহস্য বের হয়ে আসবে বলে জানান একাধিক চাকুরী প্রত্যাশী। তাছাড়া সরকারের শেষ সময়ে রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপি ও রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) আমজাদ হোসেনসহ রেল অঙ্গনকে বির্তকিত করতে একটি মহল সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
নিয়োগ কমিটির অন্যতম সদস্য ও এসপিও সিরাজুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখানে অনেকেই সুপারিশ করেন সবার চাকুরীতো হয় না। এখানে যারা চাকুরী পেয়েছেন তারা খুশী হবেন আর যারা পাননি তারা একটু হতাশাগ্রস্ত তো হবেই। তবে নিয়োগ বাণিজ্যের কোন অভিযোগের বিষয়ে কিছু জানি না। আর কেউ বাণিজ্য করলে গোপনেই তো করবে বলে জানান তিনি। তাছাড়া এ বিষয়ে জানতে নিয়োগ কমিটির আহবায়ক ইকবাল হোসেনকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক সদস্যসহ রেলের কর্মকর্তারা বলেন, আহবায়ক এককভাবে সব তৈরি করে কৌশলে কমিটির সদস্যদের ডাকা হয়। এতে এক বছর সময় আছে বলে সবাইকে দুর্বল করে তার (আহবায়ক) ইচ্ছা মতো কৌশলে কাজ করেছেন। এখানে জিএমকে ঠিক রেখে আহবায়কের ইচ্ছা মতো কাজ করেছেন। চলমান অন্য নিয়োগেও জিএম’র আত্বীয়-স্বজনদের চাকরি দিতে কৌশলী তৎপর জিএম। তিনি (আহবায়ক) পূর্বাঞ্চলের আরএনবির প্রধান হওয়ায় কেউ প্রকাশ্যে কথা বলেন না। একই সাথে বিভিন্ন স্থানে টাকা সংগ্রহের জন্য বাহিনীতে আত্বীয়-স্বজন ছাড়াও নির্ভরযোগ্য সদস্য রয়েছে। তবে বিষয়টি গোপনে বিস্তারিত তদন্ত করলে অনেক তথ্য বের হয়ে আসবে বলেও জানান তারা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীতে জনবল সংকটের কারণে শূন্য পদের বিপরীতে ২০১৭ সালে ১৮৫ জন সিপাহী নিয়োগের বিষয়ে নিয়োগ বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে পত্রিকায়। প্রথমে এ নিয়োগের প্রক্রিয়া পশ্চিমাঞ্চলে হওয়ায় কথা থাকলেও কৌশলে পূর্বাঞ্চলে আনা হয়েছে। এরপর বাহিনীর প্রধান ইকবাল হোসেনকে নিয়োগ কমিটির আহবায়ক করে ৫ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
এদের মধ্যে অন্যরা হলেন সদস্য সচিব কমান্ড্যান্ট আশাবুল ইসলাম, সদস্য- কমান্ড্যান্ট জহিরুল ইসলাম, এসপিও সিরাজুল্লাহ, কমান্ড্যান্ট ফুয়াদ হোসেন পরাগ। ফলাফলের তালিকা সূত্রে জানা গেছে, সিপাহী নিয়োগের ১৮৫ জনের মধ্যে চট্টগ্রামের ১১ জন, মাগুরার কোন যোগ্য প্রার্থী নেই।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর