চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়েই তোলপাড় শুরু হয়েছে দক্ষিণ জেলার তৃনমূল পর্যায়ে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। অধিকাংশই ত্যাগী ও যোগ্য নেতা পদ বঞ্চিত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে ঘোষিত কমিটি নিয়েই। চলছে নেতাকর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভও। কমিটি নিয়ে ‘খোদ’ জেলার সাবেক নেতারাও হতাশ এবং ক্ষুব্ধ। তবে ঘোষিত কমিটিতে যেসব নেতাদের নিয়ে বির্তকিত উঠেছে, তাদেরকে যাচাই-বাছাই করেই বাদ দেয়ার পরিকল্পনাও চলছে বলে কেন্দ্রীয় হাই কমান্ড সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অবশেষে নানাবিধ ‘বির্তক’ নিয়ে ১৭ বছর পরেই চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঘোষিত এই কমিটিতে ছাত্র ইউনিয়ন, বিবাহিত, ছাত্রত্ব নেই, ব্যাংকার, নাশকতা মামলার আসামি, বিএনপি নেতার ভাই, ইয়াবা ব্যবসায়ী, টেন্ডারবাজ, শিবির সাথী, বয়স ৪০ ছুঁইছুঁই, জামায়াত পরিবারের সন্তান, প্রধানমন্ত্রী নিয়ে কটুক্তিসহ নানাবিধ বির্তকিত নেতাও স্থান পেয়েছে। গঠনতন্ত্র মোতাবেক ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও ২৫১ জনের কমিটিতে সহ-সভাপতিই করা হয়েছে ৬০ জন। এসব নিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের তৃনমূল নেতাদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সদ্য ঘোষিত কমিটিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান পাওয়া নানাভাবে বির্তক রয়েছে এমন নেতাদের মধ্যে দক্ষিণের সহ-সভাপতি মনজুর আলম, ফয়সাল জামি সাকি, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাইদুর রহমান জিহান, সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদিন ফরহাদ, মোহাম্মদ মুছা, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে বদরুদ্দোজা জুয়েল, আজিজুল হক তুহিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সুমি আক্তার রাইসা সাংগঠনিক সম্পাদক পদে কলিমুল্লাহ, হামিদ হোসাইন, তসলিম উল্লাহ চৌধুরী, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা উপ-সম্পাদক গাজী আমিনুর রশিদ, শিক্ষা ও পাঠচক্র উপ-সম্পাদক ফিরোজুল ইসলাম মুন্না, সাংস্কৃতিক উপ-সম্পাদক দাউদ মানিকসহ আরও একাধিক আলোচিত নেতা রয়েছেন যারা নানাভাবে বির্তকিত।
ছাত্র ইউনিয়নের কথা স্বীকার করে ঘোষিত নতুন কমিটির তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক সুমি আকতার রাইসা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চবিতে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পর আমার এক আপু আমাকে ছাত্র ইউনিয়নের মিটিং-মিছিলে নিয়ে যেত প্রায় ৬ মাস। কিন্তু যখই বুঝতে পারি এটি রাজনৈতিক দল। তখন থেকেই আমি আর যায়নি। এরপর থেকেই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। তবে অতীতে কোন সময় পদ-পদবী ছিল না বলে জানান রাইসা।
ঘোষিত কমিটির সহ-সভাপতি পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাংকার জয়নাল আবেদিন ফরহাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি শর্ট কমিটিতে ছিলাম। কিন্তু বয়স চলে যাচ্ছে বলেই দ্রুত চাকরিতে যোগদান করেছি। চাকরির কারণ এবং কমিটিতে নতুন কেউ আসতে ছাত্রলীগের কমিটি থেকে না রাখতে বলেছি। কিন্তু আজ (বুধবার) দেখলাম, কিছু অছাত্র, বয়স্ক ও বির্তকিত কিছু লোক নিয়েই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। দেখেই দুঃখজনক মনে হলো। তবে এটা একটু আরো যাচাই-বাছাই করার দরকার ছিল।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ বছর ধরেই কমিটি না হওয়ার বেদনায় শেষ পর্যন্ত ঘোষণা হওয়াতেই মন্দের ভাল হিসেবেই অনেকেই খুশী। এতে এবার নতুন নেতৃত্ব তৈরিসহ নানাবিধ সুফল আসতে পারে বলেও জানান দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান অধিকাংশ ত্যাগী ও যোগ্য নেতারা। গতকাল বুধবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত ২৫১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখানে সহ-সভাপতি করা হয়েছে ৬০ জন। এর আগে ২০০৩ সাল থেকেই আহবায়ক কমিটি ছিল দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগে। সর্বশেষ সদ্য ঘোষিত দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম বোরহান উদ্দিনের নেতৃত্বেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার এই কমিটির অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় কমিটি।
বিডি-প্রতিদিন/সিফাত আব্দুল্লাহ