চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, ‘আমি ১৮০ দিন সময় পেয়েছি, ১৮০ দিনই রাস্তায় থাকব। আমার ভুল হতে পারে, তবে অসততা থাকবে না। ভুল যদি দেখিয়ে দিবেন, সেটা স্বীকার করার এবং সংশোধন করার সৎ সাহস আমার আছে। ১৮০ দিনের প্রতিটি মুহূর্তই আমার জন্য চ্যালেঞ্জ। আগে আমাকে পুকুরে নামতে দিন। পুকুরে নামলে তখন দেখবেন আমি কিভাবে সাঁতার কাটি।’
দায়িত্ব গ্রহণের পর চসিকের সম্মেলন কক্ষে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় নতুন প্রশাসক এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টায় নগরীর টাইগার পাসে অস্থায়ী নগর ভবনে প্রশাসকের দায়িত্ব বুঝে নেন তিনি।
এর আগে সকাল ৮টায় বাসভবন থেকে বের হয়ে কাট্টলী হজরত মঈনুদ্দিন শাহ্ (রহ.) এবং জেল রোডে হজরত আমানত শাহ্ (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন। এরপর সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে চসিকের টাইগারপাস অস্থায়ী কার্যালয়ে আসেন। এ সময় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে স্বাগত জানান। এর কিছুক্ষণ পরেই আসেন সদ্য বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। দায়িত্ব গ্রহণ করে সম্মেলন কক্ষে চসিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন নতুন প্রশাসক।
এ সময় পাশে ছিলেন বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। সদ্যবিদায়ী মেয়র প্রশাসককে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এরপর বেলা ২টায় পোর্ট কানেকটিং রোডের দুর্ভোগের চিত্র পরিদর্শন করেন।
প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়ে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের কোনো রকম ছাড় দেয়া হবে না। মেয়র দায়িত্ব শেষ করে চলে যাবেন, কিন্তু আপনারা এখানে থাকবেন। তাই আমার অনুরোধ, আপনাদের উপর অর্পিত যে দায়িত্ব তা শতভাগ সততার সঙ্গে পালন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগকৃত প্রশাসক হিসেবে আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। এই সিটি কর্পোরেশনকে আমি দলীয় কার্যালয় করব না। এখান থেকে নগরবাসীর সেবায় যা প্রয়োজন সেটাই করব।’
পরিচ্ছন্নতা বিভাগের উদ্দেশে সুজন বলেন, ‘যেদিন বৃষ্টি হবে আমিও আপনাদের সঙ্গে থাকব। দেখব কোথায় পানি জমে, কেন জমে। ঘরের মধ্যে থেকে, ওয়াকিটকিতে- ‘হ্যালো আমি কামাল স্টোরের নিচে আছি, পানি পরিষ্কার করছি’ সেটা হবে না। আমরা মহিউদ্দিন চৌধুরীর কর্মী। রাতের একটা দুইটা পর্যন্ত কাজ করেছি।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে সুজন বলেন, ‘কোথায় সমস্যা আছে আমাকে জানান। সমালোচনাকে ভয় পাই না। আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করব। আমাকে ১৮০ দিন সময় দিয়েছে, ইনশাআল্লাহ ১৮০ দিনই আমি রাস্তায় থাকব। আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ আমার হাতে নেই যে রাতারাতি সব সমস্যা শেষ করতে পারব। কাজ করতে গিয়ে ভুল হতে পাওে, কিন্তু ডিজঅনেস্টি থাকবে না। ভুল ধরিয়ে দিলে সংশোধন করার মত মন আমার আছে।’
সদ্য বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, ‘১৮০ দিনের জন্য নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে চসিক প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জননেত্রী তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিকের ওপর আস্থা রেখেছেন। আমি খুশি। তিনি যখনি সহযোগিতা চাইবেন শতভাগ করবো। আমরা একসঙ্গে ছাত্র রাজনীতি করেছি।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে বিদায়ী মেয়র বলেন, ‘চসিক প্রশাসক সঠিক ও সুচারুভাবে যাতে দায়িত্ব পালন করতে পারেন সে ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন। নেতিবাচক সংবাদে জটিলতা সৃষ্টি হয়।’
চসিকের বিভাগীয় প্রধানদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যেভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছেন আরও বেশি করে আরও আন্তরিকতার সঙ্গে উনাকে সহযোগিতা করবেন। তাহলে নগরবাসী বেশি সেবা পাবে।’
চসিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামশুদ্দোহা, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমদ, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন আহমদ, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ একেএম রেজাউল করিম চৌধুরী, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন