চট্টগ্রামে নির্মমভাবে মা-ছেলে খুনের ঘটনায় সন্দেহের তীর সেই পাতানো ভাই ফারুকের দিকে। যেকোনো সময় গ্রেপ্তারও হতে পারেন ফারুক। খুনের পর থেকেই সেই ফারুক পলাতক থাকায় এবং মা-ভাই খুনের পর বোনের অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ প্রাথমিকভাবে জড়িত সন্দেহের মাত্রা আরও গভীর হতে চলেছে।
এছাড়া সেই ফারুককে এক নাম্বার আসামিসহ কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে সোমবার রাতেই মেয়ে ময়ূরী মামলা দায়ের করেছে চান্দাঁগাও থানায়।
অভিযুক্ত ফারুক বহদ্দারহাট খাজা রোডের বাসিন্দা এবং ওই এলাকায় একটি দোকান পরিচালনা করেন। তবে এই হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য চিহ্নিত করতে প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন বলে সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, গত সোমবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন পুরাতন চান্দগাঁও রমজান আলী সেরেস্তাদারের বাড়ি এলাকার একটি বাসা থেকে মা ও ছেলের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত গুলনাহার বেগম (৩৩) ও তার ছেলে রিফাত (৯)। গুলনাহার বেগম তার মেয়ে ময়ুরী ও রিফাতকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। গুলনাহার বেগমের স্বামী আরেকটি বিয়ে করেছেন। তিনি অপর স্ত্রীসহ নোয়াখালীতে বসবাস করেন।
পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে খুন হওয়া নারী গুলনাহার বেগম (৩৩) ছিলেন স্বামী পরিত্যক্তা। ১৬ বছর বয়সী মেয়ে এবং ৯ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়েই উক্ত এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। এতে ফারুক নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে পাতানো ভাই বোনের সম্পর্ক ছিল গুলনাহারের। এই ভাইয়ের মাধ্যমে সিঙ্গারা, পিঠা-পুলি বিক্রি এবং মেয়ের গার্মেন্টসে চাকরির টাকা দিয়েই তাদের সংসার চলতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে টাকা পয়সা ও পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে পাতানো ভাই ফারুকের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ চলছিল বেশ কয়েকদিন ধরেই। সোমবার রাতেই কোনো এক সময় নিজ বাসাতেই নির্মমভাবে খুন হন গুলনাহার বেগম (৩৩) এবং তার ৯ বছর বয়সী ছেলে রিফাত।
নিহত গুলনাহারের মেয়ে গার্মেন্টস কর্মী ময়ুরী বলেন, পাতানো ভাই ফারুকের সাথে ঝগড়া লেগে ছিলো বেশ কিছুদিন ধরে। তখন থেকেই বিভিন্ন সময় খুন করার হুমকিও দিয়ে আসছিল ফারুক। প্রতিদিনের মতো সকালে গার্মেন্টস কারখানায় কাজে চলে যায়। রাতে এসে বাসায় কারো সাড়া শব্দ না পেয়ে ভিতরে প্রবেশ করে দেখি মা ও তার ভাইয়ের লাশ পড়ে আছে মেঝেতে এবং বাথরুমে।
তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের পেছনে ফারুক নামের সেই ব্যক্তিই জড়িত। আমার মাকে বোন ডেকে বাসায় আসা যাওয়া করতো। পাঁচ বছর ধরে ফারুকের সঙ্গে আমাদের পরিচয়।
চট্টগ্রাম চান্দঁগাও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খন্দকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সুরতহাল রিপোর্ট অনুযায়ী ছুরিকাঘাতে এই নারীকে হত্যা করা হয়েছে এবং হত্যাকাণ্ড দেখে ফেলায় ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভিকটিমের মেয়ের অভিযোগ এবং প্রাথমিক অনুসন্ধানে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য পাতানো ভাই ফারুককে সন্দেহ করা হচ্ছে। বর্তমানে ফারুক পলাতক রয়েছে। ফারুকসহ সন্দেহ আরও বেশ কয়েকজনকে সন্দেহের চোখে রাখা হয়েছে।
তবে সোমবার রাতেই ফারুককে আসামি করে মেয়ে ময়ুরী মামলা দায়ের করেছেন। সেই ফারুককে সহ চিহ্নিতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের টিম মাঠে কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/ আবু জাফর