করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মুমূর্ষু রোগীর প্রয়োজন হয় অক্সিজেন, হাই ফ্লো নজল ক্যানোলা কিংবা অতি জরুরি আইসিইউ। সন্দেহজনক রোগীর নমুনা পরীক্ষায় দরকার পিসিআর ল্যাব। সঙ্গে চিকিৎসায় দরকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এসব সেবাই আছে গণমানুষের সহযোগিতায় পরিচালিত চট্টগ্রামের বৃহত্তম বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে।
করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ দেখা দেওয়া রোগীরা এক ছাদের নিচেই পাবে সব ধরনের চিকিৎসা। অক্সিজেন বা আইসিইউ’র জন্য এদিক সেদিক ছোটাছুটি করতে হবে না। ১৯৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক শিশু বর্ষ উপলক্ষে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত মার্চে করোনার প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর হাসপাতালের নতুন ভবনে তৈরি করা হয় ১০০টি শয্যা। এর মধ্যে প্রস্তুত করা হয় ৬৪টি সাধারণ শয্যা, ১০টি আইসিইউ, ছয় শয্যার পৃথক শিশু কর্নার ও কেবিন ২০টি। আছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন, ৪০টি হাই ফ্লো নজল ক্যানোলা ও ৩০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার।
এছাড়া আরও হাই ফ্লো নজল ক্যানোলা ও অক্সিজেন সিলিন্ডার কর্তৃপক্ষের কাছে মজুদ আছে। গত সোমবার রোগী ভর্তি ছিল ৮০ জন। ইতোমধ্যে সেবা গ্রহণ করেছে প্রায় ৩ হাজার রোগী। করোনা ওয়ার্ডে কনসালটেন্ট আছেন ৬ জন, মেডিকেল অফিসার ২০ জন, স্টাফ নার্স ২৫ জন, স্বাস্থ্য সহকারী (মহিলা) ২৬ জন, এমএলএসস ১২ জন, সুইপার ১৬, ধোপা ২ জন, পৃথক হিসাব কর্মকর্তা ২ জন। আছে দৈনিক ১০০ নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতার ল্যাব।
হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. মাহমুদা সুলতানা আফরোজা বলেন, ‘মনে হচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি ছিল ২৮ থেকে ৩০ জন করে, কিন্তু গত সোমবার ভর্তি ছিল ৮০ জন। ফলে রোগী বাড়ছে। তবে রোগীর সেবায় হাসপাতালের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।’
মা ও শিশু হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির ট্রেজারার মো. রেজাউল করিম আজাদ বলেন, ‘গণমানুষের আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত শিশু হাসপাতালে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় শতভাগ প্রস্তুত। করোনা ওয়ার্ডের জন্য দুইজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আছে পর্যাপ্ত মেডিকেল অফিসার, নার্স ও স্বাস্থ্য সহকারী।
ইতোমধ্যে ল্যাবে পরীক্ষা করা হয় ১১০০ নমুনা। ল্যাবে আছে দুইজন অধ্যাপক ও ৮ জন টেকনিশিয়ান। তবে আশার কথা হলো, করোনাকালে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ থেকে নগদ অর্থ ও চিকিৎসা উপকরণ মিলে প্রায় ছয় কোটি টাকার সহযোগিতা পাওয়া গেছে।’
হাসপাতালের আজীবন সদস্য ফোরামের সদস্য সচিব ম. মাহমুদুর রহমান শাওন বলেন, ‘চট্টগ্রামের বৃহত্তম বেসরকারি এ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে করোনা রোগীর চিকিৎসায় নানা প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সেবা, নমুনা পরীক্ষা, স্যাম্পল কালেকশন ও রোগী পরিবহনে অ্যাম্বুলেন্সসহ সব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া জরুরি মুহূর্তে আরও ৬০টি শয্যা যুক্ত করা যাবে।’
জানা যায়, মা ও শিশু হাসপাতাল প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৫০ শয্যার ১৪ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করে। প্রতিটি তলা ৫০ হাজার বর্গফুট আয়তনের। ১৪ তলা নতুন ভবনের ৬ তলা পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুত। নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলায় চিকিৎসকদের আবাসন ব্যবস্থা এবং তৃতীয় তলায় আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়। চতুর্থ থেকে ৬ষ্ঠ তলা পর্যন্ত কাজ শেষ এবং সপ্তম থেকে চতুর্দশ তলা পর্যন্ত অবকাঠামো প্রস্তুত। সুযোগ আছে চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্য-কর্মীদের চিকিৎসা পরবর্তী নিজস্ব কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থার। তাছাড়া বর্তমানে এ হাসপাতালের পুরাতন ভবনের ৮০০ শয্যায় চলছে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাও।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর