প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি শেষ। দিন-রাত সমানে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা। বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও তিথির দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা। অবশেষে দেখা মিলল প্রত্যাশিত ডিমের। তবে তা মা মাছের নমুনা ডিম। উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজে হালদা নদীতে মা মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছে। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ডিমগুলো সংগ্রহ করা হয়।
জানা যায়, প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথিই ডিম ছাড়ার উপযুক্ত সময়। এসব তিথিতে বজ্রসহ প্রবল বর্ষণের ফলে নদীতে ঢলের সৃষ্টি হয়ে থাকে। নদীর উজান অংশ পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, মানিকছড়ি, উত্তর চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে প্রবল বর্ষণের ফলে নদীর সঙ্গে যুক্ত ছড়া ও শাখা খালের মাধ্যমে পাহাড়ি ঢল হালদা নদীতে এসে পড়ে। তখন ঢলের সময় মা মাছ ডিম ছেড়ে থাকে। চলতি মৌসুমে গত এপ্রিল থেকে তিনটি তিথি (জো) চলে যায়। তবে মা মাছ ডিম ছাড়েনি।
তবে গত সোমবার ও মঙ্গলবার বৃষ্টির পর মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে। তাছাড়া গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে পূর্ণিমার জো। আগামী ২৮ মে পর্যন্ত থাকবে এ জো’র প্রভাব। গত মঙ্গলবার রাতে হালদা নদীর হাটহাজারী ও রাউজান অংশের আজিমের ঘাট, অংকুরি ঘোনা, কাগতিয়ার মুখ, গড়দুয়ারা নয়াহাট, রাম দাশ মুন্সির ঘাট, মাছুয়া ঘোনা ও সত্তার ঘাটসহ আশপাশের অংশে কয়েক শত নৌকার মাধ্যমে ডিম সংগ্রহকারীরা ডিম আহরণ শুরু করেছে। তবে গড়দুয়ারা, নয়াহাট ও সিপাহী ঘাটে নমুনা ডিম বেশি পাওয়া গেছে বলে জানা যায়।
গড়দুয়ারার ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মা মাছ ডিম ছাড়ে। আমিও ২০০ গ্রামের মত ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছি। অন্য ডিম সংগ্রহকারীরাও ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করেছেন। প্রতিই বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখেন। এবছরও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে প্রায় এক হাজার জন ডিম সংগ্রহকারী প্রস্তুতি নিয়েছেন।
হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, কিছু মা মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছে। কিন্তু কী পরিমাণ নমুনা ডিম ছেড়েছে তা এই মুহুর্তে নির্ণয় করা যায় না। তবে ডিম সংগ্রহ করতে সংগ্রহকারীরা অপেক্ষায় আছেন। আমরা এখনও মা মাছের ডিম ছাড়ার অপেক্ষায় আছি। বৃষ্টি হলেই মা মাছ ডিম ছাড়বে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, গত এক মাস ধরে ডিম সংগ্রহকারীরা বৃষ্টির অপেক্ষায় আছে। গত দুই দিনে বিরতিতে বৃষ্টি হলে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। গত মঙ্গলবার রাতে পূর্ণিমার জো’ তে মা মাছ নমুনা ডিম ছাড়ে।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২২ মে হালদা নদী থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। এটি ছিল একটি রেকর্ড। এর আগে ২০১৯ সালে ৭ হাজার কেজি, ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে এক হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে মাছ পুরোমাত্রায় ডিম ছাড়েনি। মাত্র ৭৩৫ কেজি নমুনা ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি, ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি, ২০১৩ সালে ৬২৪ কেজি ও ২০১২ সালে এক হাজার ৬০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল