হালদা নদীর রাউজান পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ গহিরা এলাকার হালদার সংযোগ খাল বুড়িসর্তা থেকে গত ১৪ জুলাই প্রায় সাড়ে ৮ ফুট দৈর্ঘ্যরে ১২০ কেজি ওজনের একটি মৃত ডলফিন উদ্ধা করা হয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে গত বুধবার দুপুরে হালদা নদীর আজিমের ঘাট এলাকায় দাঁতসহ মুখের একাংশ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় একটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই বৃহস্পতিবার সকালে রাউজান উপজেলার পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকায় আকেকটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়। মাত্র আট দিনের ব্যবধানে তিনটি ডলফিন উদ্ধার করা হয়।
হালদা নদীর ডলফিনের ওপর লোভাতুরদের শকুনি দৃষ্টি পড়েছে। আটদিনে তিনটি ডলফিনের মৃত্যু হয়। কখনো জালে আটকে, কখনো ইঞ্জিনচালিত নৌকার আঘাতে মৃত্যু হচ্ছে ডলফিনের। হালদা নদীতে নৌ পুলিশ সক্রিয় থাকলেও নীরব প্রশাসন ও বনবিভাগ। সর্বনাশ যা হওয়ার তা হয়েই যাচ্ছে।
জানা যায়, ২০১৯ সালে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ডলফিন রক্ষায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে (বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ) সদস্য সচিব করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
তবে অভিযোগ ওঠেছে, মৃত ডলফিন মাটি চাপা দেওয়া ছাড়া আর কোনো কাজে দেখা যায় না বন বিভাগকে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সাল সেপ্টেম্বর থেকে ল্যাবটি ডলফিন মৃত্যুর রেকর্ড করছে। ২০১৭ থেকে এ পর্যন্ত হালদা নদী থেকে ৩৮টি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে কোনটির শরীরে ক্ষতের চিহ্ন, কোনটি জালের মধ্যে আটকে, কোনটির দেহে ইঞ্জিনের আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। ২০২০ সালের এক জরিপে হালদায় ১২৭টির মত ডলফিনের উপস্থিতি মিলেছিল।
চবি হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, মাত্র আট দিনের ব্যবধানে তিনটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা এটি বড় সতর্কবার্তা ও উদ্বেগের। বৃহস্পতিবার উদ্ধারকৃত ডলফিনটির দৈর্ঘ্য সাত ফুট ও ওজন ৬০ কেজি। তবে পচে যাওয়ায় এটির মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তিনি বলেন, বর্তমানে নদীতে প্রচুর জাল বসানো হচ্ছে। ডলফিন কিছুক্ষণ পরপর পানির উপরে ভেসে ওঠে শ্বাস নিতে। এ সময় জালে আটকা পড়ে কিছুক্ষণ শ্বাস নিতে না পারলেই ডলফিন মারা যায়। বেশিরভাগ সময় জাল ছাড়াতে ডলফিনকে আঘাত করা হয়। তাতেও ডলফিনগুলো মারা যায়। পরে মৃত ডলফিন নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) গাঙ্গেয় ডলফিনকে ‘বিপন্ন’ হিসেবে লাল তালিকায় রেখেছে। ২০১২ সালের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুসারে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত। ডলফিনের চোখ নেই। মূলত ইকোসাউন্ড দিয়ে এরা চলাফেরা ও খাবার সন্ধান করে। এদের শরীরের গঠন নরম প্রকৃতির। বিশ্বের বিভিন্ন নদীতে বিপন্ন প্রজাতির ডলফিন আছে মাত্র ১ হাজার ১০০টি।
বিডি প্রতিদিন/এএম