চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে গত এক বছরে (ফেব্রুয়ারি ২০২৪-ফেব্রুয়ারি ২০২৫) মৃগী ও খিচুনি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন প্রায় ৬০০ রোগী।
একই সময়ে প্রতি রবিবার আউটডোরের এপিলেপ্সি ক্লিনিকে ২৫০ জন মৃগী রোগীকে সেবা প্রদান করা হয়। মৃগী ও খিচুনি সংক্রান্ত রোগী থাকলেও এ রোগের চিকিৎসায় পৃথক কোনো ব্লক বা ইউনিট নেই। ফলে রোগীদের হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগ থেকেই চিকিৎসা নিতে হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষ মৃগীরোগে আক্রান্ত। সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মিত ওষুধ সেবন না করায় এ রোগে দীর্ঘমেয়াদি অক্ষমতার হার বাড়ছে। নিয়মিত চিকিৎসা নিলে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃগীরোগে খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, তবে রোগমুক্তি সম্ভব নয়। ১০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। কারণ দেশে এ রোগে সার্জারির ব্যবস্থা সীমিত।
জানা যায়, চমেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে বর্তমানে শয্যা আছে ৯০টি। কিন্তু প্রতিনিয়তই রোগী ভর্তি থাকে ১২০-১৩০ জন। মাঝে মাঝে আরও বেশি রোগীও ভর্তি থাকে। এরই মধ্যে মৃগী রোগীদের চিকিৎসা দিতে হয়। এ বিভাগে বর্তমানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন ১৭ জন, রেজিস্ট্রার আছেন ৭ জন, ট্রেইনি চিকিৎসক আছেন ২৫ জন এবং প্রতি শিফটে নার্স কাজ করেন ১৭।
চমেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. সামি এম আদনান বলেন, মৃগী রোগী প্রতিনিয়তই হাসপাতালে আসে। তবে এর জন্য পৃথক এপিলেপ্সি ব্লক অথবা এপিলেপ্সি ইউনিট থাকলে রোগীদের ডেডিকেটেড চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হব। এখন স্থান সংকটে চিকিৎসা দেওয়াটা কঠিন হয়ে যায়। অথচ যথোপযুক্ত চিকিৎসায় ৭০ শতাংশ মৃগী রোগী সম্পূর্ণ ভাল থাকে। তাছাড়া, হাসপাতালে মৃগী রোগীদের রোগ নির্ণয়ের অন্যতম ইলেক্ট্রো এনসেফালোগ্রাম (ইইজি) পরীক্ষা করা হয়। জনবলও আছে। দরকার কেবল পৃথক একটা ইউনিট। আশা করি, সেটার একটা ব্যবস্থা হবে।
চিকিৎসকরা মনে করেন, মৃগী রোগ নিয়ে সমাজে নানা কুসংস্কার প্রচলিত আছে। শুধুমাত্র রোগের ইতিহাস এবং খিচুনির ভিডিও দেখে কোনো রকম দামি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই এই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। ৯০ শতাংশ রোগী ওষুধ খেয়ে ভালো থাকে। ৬০-৭০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ২ থেকে ৫ বছর ওষুধ খেয়ে রোগমুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে।
মৃগীরোগের লক্ষণগুলো হল হঠাৎ অস্বাভাবিক কাঁপুনি বা খিঁচুনি হওয়া, চোখ-মুখ উল্টে হাত-পা ছোড়া, অচেতন হওয়া, মুখ দিয়ে ফেনা বা লালা বের হওয়া, শিশুদের ক্ষেত্রে চোখের পাতা স্থির হয়ে যাওয়া, একদৃষ্টিতে একদিকে চেয়ে থাকা অথবা মানসিকভাবে সুস্থ কোনো ব্যক্তি অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করা।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল