পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূরের অপসারণ দাবিতে থানা ঘেরাও করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বুধবার সকাল ১০টার দিকে পটিয়া থানা ঘেরাও করেন। এরপর বাইপাস মোড়ে অবস্থান করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পটিয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি দীপংকর তালুকদারকে আটক করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। পরে তাকে পটিয়া থানা চত্বরে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু ওই ছাত্রলীগ নেতার নামে কোনো মামলা না থাকায় পুলিশ গ্রেফতার করতে চায়নি। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বাকবিতণ্ডা ও উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ওই ছাত্রলীগ নেতাকে নিজেদের হেফাজতে নেয় এবং নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করে।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে চার পুলিশ সদস্যসহ প্রায় ২০ জন আহত হয়। এ ঘটনার জের ধরে বুধবার সকাল ১০টার দিকে ছাত্ররা প্রথমে পটিয়া থানা ঘেরাও করে ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূরের অপসারণ দাবি করে। এরপর তারা বাইপাস মোড়ে অবস্থান করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে।
অবস্থান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীরা পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। মহাসড়কে অবস্থানকালে নেতাকর্মীরা ‘ওসি তুই স্বৈরাচার-এ মুহূর্তে পটিয়া ছাড়, দালালি না রাজপথ- রাজপথ রাজপথ, ইনকিলাব ইনকিলাব-জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’ এমন শ্লোগান দেওয়া হয়। এসময় মড়াসড়কের একাংশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এনসিপি নেতাদের অভিযোগ, পটিয়ায় এক ছাত্রলীগ নেতাকে স্থানীয় জনতা আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলেও তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গেলে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ হামলা চালায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক রিদওয়ান সিদ্দিকী বলেন, আমরা জানতে পারি, পটিয়া স্টেশনে ছাত্রলীগের একজন নেতা অবস্থান করছেন। পরে তাকে ধরে থানায় নিয়ে গেলে পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিপেটা করে। আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম নগরের মুখপাত্র ফাতেমা খানম বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে দুই দফা হামলার প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে নেতা-কর্মীরা থানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। সেখানেও পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় ধাক্কাধাক্কিতে একজন নারী কর্মী আহত হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
এদিকে, এ ঘটনার জের ধরে বুধবার বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে নগরের জাকির হোসেন সড়কের খুলশী ৩ নম্বর এলাকায় পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূরের অপসারণের দাবিতে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ। কর্মসূচির কারণে ডিআইজি কার্যালয় সংলগ্ন ব্যস্ত সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। গাড়ি চলছে ধীরগতিতে।
এনসিপি চট্টগ্রাম মহানগর সংগঠক রিয়াদ বলেন, জনগণ দুর্নীতিগ্রস্ত এক ছাত্রনেতাকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ওপর চড়াও হয়েছে। তাই আমরা এই অন্যায়ের বিচার চাইতে ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে পটিয়ার ওসির অপসারণ দাবিতে অবস্থান নিয়েছি। আমরা মিছিল বা স্লোগান ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে এসেছিলাম। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ না করায় বাধ্য হয়ে সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, গত মঙ্গলবার রাতের ঘটনার জের ধরে কিছু নেতাকর্মী পটিয়া থানার সামনে অবস্থান নেয়। পুলিশ সদস্যরা সেখানে সতর্ক আছেন। আমরা আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করছি। আশা করি, অপ্রীতিকর কিছু হবে না, শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই