চট্টগ্রামে জমে উঠেছে শেষ মুহূর্তের ঈদ বাজার। রোজা বিশটির পর থেকে নগরের প্রায় সব শপিংমলে ভীড় বাড়ছে। বিশেষ করে ইফতারের পর থেকে সেহেরী পর্যন্ত বিক্রি চলছে নগরের শপিংমলগুলোতে। শপিংমলের পাশাপাশি ভীড় বাড়ছে ‘গরিবের মার্কেট’ হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের পৌর জহুর হকার্স মার্কেটে। এই মার্কেটে সব সময় দিন ও রাত ভীড় লেগেই থাকে। ঈদকে ঘিরে সে ভীড় বাড়ছে আরও কয়েকগুন। বিশেষ করে এ অঞ্চলের কম দামে ভালো মানের কাপড়ের জন্য মানুষের ভরসা হয়ে উঠেছে এ মার্কেট। ফলে চট্টগ্রামসহ আশেপাশের জেলা থেকেও ঈদ শপিং করতে জহুর হকার্স মার্কেটে আসছেন নানা শ্রেণিপেশার লোকজন।
জহুর হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আগের মতো মানুষ কেনাকাটা করতে পারছে না। আগে যিনি দুইটা শার্ট-প্যান্ট কিনতে আসতেন, এখন তারা একটা শার্ট কিনে চলে যাচ্ছেন। ফলে আগের তুলনায় বিক্রি কম হলেও ক্রেতার আসছেন। আশা করি সামনে আরো বেশি বিক্রি বাড়বে।
দোকান কর্মচারীরা বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে রমজানে সকালের দিকে প্রায় ফাঁকা থাকলেও দুপুরের পর থেকে ক্রেতাদের ভীড় শুরু হয়। আমাদের হকার্স মার্কেটে সারাবছর ক্রেতাদের ভীড় থাকে। তবে এবার ঈদ উপলক্ষে যে আশা করেছি সেভাবে বিক্রি এখনো শুরু হয়নি। শুক্রবার থেকে কিছুটা বিক্রি বেড়েছে, আশা করছি সামনের দিনগুলোতে আরো ভীড় বাড়বে।
নগরীর লালদীঘি পাড় এলাকার জহুর হকার্স মার্কেটের প্রবেশ মূল ফটকে দেখা যায়, ক্রেতাদের উপচেপড়া ভীড়। এক গলি দিয়ে প্রবেশ করে আবার আরেক গলি হয়ে বের হচ্ছেন ক্রেতারা। এ মার্কেটে ঈদ পার্বন ছাড়াও সব সময় থাকে জমজমাট। মূলত কম দামে এ মার্কেটে ভালো কাপড় পাওয়া যায়। এছাড়াও মৌসুম অনুযায়ী এখানকার ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন ডিজাইনের কাপড় আনেন। ফলে মধ্যম ও নিম্ন মধ্য আয়ের মানুষের কাছে জনপ্রিয় এই মার্কেট।
মার্কেটের ভিতরে গিয়ে কথা হয় রফিকুল আলম নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এসেছেন ছেলেকে নিয়ে শপিং করার জন্য। ছেলেকে নিয়ে কয়েকটি দোকান ঘুরে পছন্দ হয়েছে একটি পাঞ্জাবি ও কটি। ছেলের শখ সাদা পাঞ্জাবির উপরে মুজিব কোট পড়বে। বাবার কাছে বায়না ধরে পছন্দের কাপড় পেয়ে খুশি ছেলেও।
রফিকুল আলম বলেন, ছেলের মুখে হাসি ফুটেছে এটা বড় বিষয়। এ পাঞ্জাবি আর কটি বড় কোন শপিংমলে গেলে দুই-আড়াই হাজার টাকা নিতো। এখান থেকে ৮শ’ টাকার মধ্যে নিয়েছি। কয়েকদিন পর লোকজনের ভীড়ে মার্কেটে আসা কঠিন হয়ে যাবে। তাই আজকেই বাচ্চাকে নিয়ে ঈদের জুতা ও পোশাক কিনতে এসেছি।
জহুর হকার্স মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, কেউ বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে, আবার অনেকে একা কেনাকাটা করতে এসেছেন। নিজের ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য পছন্দের পোশাক বাছাই করছেন ক্রেতারা। চলছে বিক্রেতাদের সঙ্গে দর-কষাকষি। দরদাম ঠিক হলে কিনে নিচ্ছেন পোশাক।
হকার্স সমিতির নেতৃবৃন্দদের মতে, মূলত করোনা মহামারির পর থেকে দেশে অনেক মানুষ বেকার হয়ে পড়ে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই করার চেয়ে হকার পেশা মূলত সম্মানের। তাই অনেকে এ পেশাকে বেছে নিয়েছেন। এর মধ্যেও সরকার হকার্সদের নিয়ে কোন নীতিমালা প্রণয়ন করেননি। যে যেভাবে পারছেন, হকার্সদের ক্ষতি করে যাচ্ছেন। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনকেও বারবার পূণর্বাসন বা জায়গা করে দেয়ার কথা বলা হলেও তা করছেন না কর্তৃপক্ষ। এরই মাঝে তারা ঈদ, পূজাসহ নানা অনুষ্ঠানে ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন। তবে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন হকার্স সমিতির নেতৃবৃন্দর।
মূল সড়কের সাথে লাগোয়া জুতা দিয়ে সাজিয়েছেন বেশ কয়েকজন দোকানি। তারা বলেন, প্রচুর মানুষ আসছে জুতা কিনতে। দিনের বেলায় গরম পড়াতে ববিক্রি কম হলেও রাতের দিকে ক্রেতা থাকে বেশি। এখানে ১৫০ থেকে ৫০০ টাকায় ক্রেতারা পছন্দসই জুতা কিনতে পারেন। কিন্তু শপিংমলে এত সস্তা দামে জুতা পাওয়া সম্ভব নয়।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত