ফিটনেসবিহীন গাড়ি, বাড়তি ভাড়া আদায় ও নকল লাইসেন্সের বিরুদ্ধে অভিযানের জেরে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। রবিবার রাজধানীতে দুপুর থেকে রাস্তায় চরম পরিবহন সংকট দেখা দেয়। গণপরিবহন চলাচল না করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
রবিবার সকালে বাড়তি বাস ভাড়া আদায় করায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে কয়েকজন বাসচালককে জরিমানা করা হলে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় শ্রমিকেরা। রবিবার সকাল ১০টা থেকে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে এ অভিযান চালায়।
বাস স্টপেজগুলোতে শত শত যাত্রী অপেক্ষা করলেও মিলছে না কোনো গণপরিবহন। অনেকেই পাঁয়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ তিন-চারগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে রিকশা, ভ্যানে যাতায়াত করছেন। এই সুযোগে রিকশা ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছেন চালকরা।
বাস চালক ও শ্রমিকেরা বলছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে কয়েকজন বাসচালক ও শ্রমিককে দণ্ড দেওয়ায় তারা বাস চালাচ্ছেন না।
দুপুরে রাজধানীর সদরঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সদরঘাট বাস টার্মিনালে স্কাইলাইন, আজমেরী গ্লোরীর ১০-১২ টি বাস রয়েছে। কয়েকশ যাত্রী বাসের অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলেও বাসগুলো বাসস্ট্যান্ড ছাড়ছে না। এ বিষয়ে আজমেরী গ্লোরীর কয়েকজন চালক-হেলপার জানান, গ্যাসের দাম বাড়লেও অতিরিক্ত বাস ভাড়া দেন না যাত্রীরা। আবার স্টুডেন্ট গাড়িতে উঠলে আরও লোকসানে পড়তে হয় তাদের। এ নিয়ে সকালে নাকি মিরপুরে ঝামেলা হয়েছে। গুলিস্তান থেকে পুলিশ আমাদের পরিবহন শ্রমিক নেতাদের ধরে নিয়ে গেছে। পরে গুলিস্তানে কিছুটা ঝামেলা হয়েছে। আমরা এখন স্ট্রাইক করেছি, আমরা বাস চালাবো না।
এদিকে বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্লাহ বলেন, বাস ভাড়া নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটরা কয়েকজন চালককে জরিমানা করেছেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে শ্রমিকেরা সারা ঢাকায় বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা চেষ্ট করছি তাদেরকে বুঝিয়ে বাস চলাচল স্বাভাবিক করতে।
এদিকে যাত্রীদের অভিযোগ, বাসগুলো সিটিং সার্ভিস নামে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে পরে তা আবার লোকাল করে ফেলেছে। মিরপুর থেকে এয়ারপোর্ট রোড, কুড়িল, বসুন্ধরা প্রভৃতি রুটে সিটিং বাসগুলো আগে থেকেই সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় করতো। মিরপুর ১০ নম্বর থেকে বসুন্ধরা পর্যন্ত মাত্র ১০ কিলোমিটার ভাড়া নেয় ২৫ টাকা। এটা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অনেক বেশি। এখন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন স্টান্ডে বাস রেখে চালকরা চলে যাওয়ায় রাস্তায় শতশত বাস দাঁড়িয়ে আছে। এর ফাঁকে অসংখ্য প্রাইভেট গাড়ীও আটকে আছে। অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে ঢাকা।
অন্যদিকে গুলিস্তানে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নারায়নগঞ্জগামী হাজারো যাত্রী বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু কোন পরিবহন চলতে দেখা যায়নি। এছাড়া রাষ্ট্রপতির ভবন সংলগ্ন রাস্তায় চালক ছাড়া অসংখ্য বাস দাঁড়িয়ে থাকায় পুরো রাস্তাই স্থবির হয়ে পড়েছে।
মতিঝিল এলাকায় হাজারো যাত্রী বাসের অপেক্ষায় থাকলেও কোন বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, দুপুরের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে যেসব গাড়ি ডিপোতে যাচ্ছে সেখান থেকে সেগুলো আর ফিরছে না। তাই রাস্তায় যানবাহন কিছুটা কম।
বিডি-প্রতিদিন/১৮ অক্টোবর ২০১৫/ এস আহমেদ