দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটছে। নদনদীর পানি নামতে শুরু করেছে। তবে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে আসছে ক্ষত। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিবরণ-
নোয়াখালী : পানি কমলেও নোয়াখালী পৌরসভার মধুপুর, স্টেডিয়ামপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে এখনো স্থানীয়রা পানিবন্দি। জেলার সদর, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার
বাসিন্দারা জানান, তাদের এলাকায় পানি নামছে ধীরগতিতে। এজন্য বেশির ভাগ এলাকায় এখনো বন্যার পানি জমে থাকায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। এদিকে পৌরবাসীর অভিযোগ, অবৈধ খাল দখল, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব এবং পানিনিষ্কাশনের নালা ও জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় শহরবাসীর এ দুর্ভোগ। হালকা বৃষ্টিতেই নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আশপাশের অনেক বাসাবাড়িতেও পানি জমে রয়েছে।
ফেনী : ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলেও প্রতিনিয়ত ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। সরকারি প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বন্যায় জেলার পাঁচ উপজেলায় ১২৬টি গ্রামীণ সড়কের প্রায় ৩১৯ কিলোমিটারে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে সড়কগুলো চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে অন্তত ৯০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। গত ৭ জুলাই থেকে ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধের ৪২টি স্থানে ভাঙন ধরলে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। এরপর ২৫ জুলাই থেকে বৃষ্টিপাত হওয়ায় ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে ফের প্লাবিত হয় লোকালয়। এতে চলতি মাসেই দুই দফা বন্যাকবলিত হয় এ অঞ্চলের মানুষ।
পানি নামার পর রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও খামারগুলোতে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী ও ফেনী সদর উপজেলার মোট ৩১৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ছাগলনাইয়ায় সবচেয়ে বেশি ১২৬ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফেনীর স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক বলেন, ‘বন্যার সময় কোনো কোনো সড়কের ওপর দিয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট পানি প্রবাহিত হওয়ায় রাস্তার বড় অংশ বিলীন হয়েছে। অনেক স্থানে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, যা দ্রুত মেরামত না করলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’।
চট্টগ্রাম : বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর কিছু নিচু এলাকায় দেখা দিয়েছে জলজট। গতকাল সকালে বৃষ্টিতে পানি জমলেও অল্প সময়ের মধ্যেই তা নেমে যায়। বৃষ্টি ও জলজটে এসব এলাকার লোকজনকে পড়তে হয় ভোগান্তিতে। সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিকের চেয়ে কম ছিল। শিক্ষার্থী ও অফিসগামীসহ সকালে কর্মস্থলের উদ্দেশে বের হওয়া লোকজনকে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়।
পতেঙ্গাস্থ আবহাওয়া অফিস বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৮৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কয়েক দফায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এ সময় অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা হিসেবে পরিচিত শুল্কবহর, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, চকবাজার, অলঙ্কার মোড় ও আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার বেশ কিছু স্থানে পানি জমে। কোথাও কোথাও সড়কে ব্যাহত হয় যানবাহন চলাচল। স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টি থেমে গেলে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পানি নেমে যায়। দুপুরের পরও দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে থাকে, যা দুর্ভোগ বাড়িয়েছে জনজীবনে। এদিকে হালদা নদীর জোয়ারের পানিতে মোহরা এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সেখানে গত তিন-চার দিন ধরে জোয়ারের পানি আটকে আছে। স্লুইস গেট না থাকায় ওই এলাকায় লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে বলে জানা গেছে।
লালমনিরহাট : বর্তমানে তিস্তার ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানি কমলেও ব্যারাজের ভাটি এলাকার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত অবস্থায় রয়েছে। গতকাল বিকাল ৩টায় পানি কিছুটা কমে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী, সদর ও পাটগ্রাম উপজেলার অন্তত ১৬টি ইউনিয়নের ১০ হাজারেরও বেশি পরিবার এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এসব এলাকায় ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, মাছের ঘের, ঘরবাড়ি ও স্কুল। তিস্তার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদর্শপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবর্ধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবর্ধন হায়দারিয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় এবং হাতিবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি পূর্বপাড়া সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়, সানিয়াজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সনীল কুমার রায় বলেন, এখন পানি কিছুটা কমেছে। বর্তমানে পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আপাতত বড় বন্যার আশঙ্কা নেই। তবে নদীভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম : উজানের ঢলে ও গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমরসহ সবকটি নদনদীর পানি বাড়লেও গত বুধবার রাত থেকে কিছুটা তিস্তার পানি কমছে। এদিকে, ব্রহ্মপুত্রের তিনটি পয়েন্টে ও দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী এবং ধরলা নদীর সেতু পয়েন্টে পানি বাড়ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।০
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, তিস্তাসহ সবকটি নদনদীর পানি কমে এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ক্রমেই সাময়িক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। এদিকে, নদী তীরবর্তী ও এর অববাহিকায় অস্থায়ী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে নিম্নাঞ্চলসমুহ তলিয়ে গেছে। চর ও দ্বীপচরগুলোয় পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চলের মরিচ, শসা, পাটসহ বিভিন্ন শাক-সবজি পানিতে তলিয়ে আছে।
মাগুরা : টানা বর্ষণে মাগুরার ডিসি কোট চত্বরসহ শহরের কলেজপাড়া, সদর হাসপাতাল পাড়াসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগীরা জানান, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।