রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রবিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আব্দুল লতিফ হলে এ ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির এ অভিযোগ উঠেছে। তিনি মাদার বখশ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাকিব।
ভুক্তভোগী ওই নারী শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, "সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে সাইকেল চালাচ্ছিলাম। এমন সময় সাকিবসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী আমাকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করে। সাইকেল থামিয়ে তাদের দিকে তাকানোর সাথে সাথেই তারা ছুটে আসে এবং বলতে থাকে, ‘আপু হেল্প লাগবে?’ এসময় আরও কিছু বাজে শব্দ ব্যবহার করে তারা। এছাড়াও সাইকেলের হ্যান্ডেল ঠিক করে দেবার অজুহাতে তারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।"
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের এমন আচরণের কারণে একটু দূরে থাকা আমার বন্ধুদেরকে ডাক দেই। তারা ঘটনাস্থলে আসার পর কটূক্তির বিষয়ে বললে কথা কাটাকাটি হয়। তবে সেখানে প্রাথমিক মীমাংসা হলেও সাকিব কোন দুঃখপ্রকাশ না করে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে।’
ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থীর বন্ধু এরশাদ আলী ও আবু আব্দুল্লাহ আহমেদ সালেহ তপু জানান, তারা প্রথমে ভেবেছিলেন সামান্য ঘটনা। তাই সেখানেই মীমাংসা করে নেন। কিন্তু সাকিব সেখানে দুঃখ প্রকাশ না করে অন্যরকম আচরণ করে। পরে যখন তারা শুনতে পান ভুক্তভোগী মেয়েকে শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করা হয়েছে তখন তারা সাকিবকে ফোন দিয়ে দেখা করতে চান। সাকিবের বন্ধু আলম তাদেরকে নবাব আব্দুল লতিফ হলের গেস্টরুমে যেতে বলেন।
ভুক্তভোগী মেয়েটি বলেন, ‘হলে পৌঁছানোর সাথে সাথে তারা হলের মূল ফটক বন্ধ করে দেয়। এসময় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের এক পর্যায়ে সাকিবসহ আরও কয়েকজন মিলে আমার বন্ধুদেরকে মারধর শুরু করে। এসময় তপু, এরশাদ, রাশেদ, রিওনসহ কয়েকজনকে তারা রড ও ইট দিয়ে পেটায়।’
এদিকে সাকিবের সাথে কথা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা কয়েকজন বন্ধু প্যারিস রোড দিয়ে হাঁটছিলাম এবং ছবি তুলছিলাম। এমন সময় ওই মেয়েটি আমাদের মাঝখানে পড়ে যায়। মেয়েটির সাইকেলে একটু সমস্যা মনে হওয়ায় তার সাহায্য লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করি। সে বললো তার সাইকেলের হ্যান্ডেল বেঁকে গেছে। আমি সেটা ঠিক করে দেই এবং মেয়েটির অনুরোধে সাইকেলে ধাক্কা দেই। এসময় নিজেদের মধ্যে পরিচিতও হই আমরা। কিন্তু কিছুদূর সামনে এগোতেই মেয়েটি তার কয়েকজন বন্ধুকে ডাকে এবং আমরা নাকি তাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেছি সেই অভিযোগ করে।’
সাকিব আরও বলেন, ‘বিষয়টি সেখানেই দুঃখপ্রকাশ করে সমাধান করে নিই। কিন্তু তারা বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে নিয়ে পরে অযথাই আমার বন্ধুদেরকে হেনস্তা করার জন্য হলে এসে মারধর করে।’
এ ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা হলের সামনে জড়ো হতে থাকেন। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিম রাজু সেখানে উপস্থিত হয়ে কোন বিষয় না শুনেই নবাব আব্দুল লতিফ হলের ছাত্রলীগ নেতা ইব্রাহিমকে মারধর করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মুজিবুল হক আজাদ খান বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। দুই পক্ষের সাথে কথা বলা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলে সমাধান করা হবে।’
বিডি-প্রতিদিন/ ০৩ অক্টোবর, ২০১৬/ আফরোজ