সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজা বেগম নার্গিসের উপর হামলার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে সিলেট। সহপাঠীর উপর হামলাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষাবর্জনসহ দুইদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ওই কলেজের ছাত্রীরা। এদিকে এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা বদরুলকে একমাত্র আসামি করে শাহপরাণ থানায় মামলা করেছেন খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস। এছাড়া হামলার ঘটনায় বদরুল আলমকে সাময়িক বহিস্কার করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানা যায়, হামলাকারী বদরুল আলমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা মানবন্ধন করেন। পরে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। সমাবেশ শেষে কলেজের শিক্ষার্থী ফজিলাতুন নেছা দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামীকাল বুধবার কালো ব্যাজ ধারণ ও জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান এবং বৃহস্পতিবার প্রতিবাদ সমাবেশ। এছাড়া তারা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দেন। কর্মসূচি ঘোষণাকালে শিক্ষার্থীরা তাদের তিনদফা দাবিও ঘোষণা করেন।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর, হামলাকারী বদরুলের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি নিশ্চিত এবং পরীক্ষার হল ও কেন্দ্রে যাতায়াতের সময় ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। মানববন্ধন ও সমাবেশে ছাত্রীরা বলেন- পরীক্ষা দিতে গিয়ে কোন ছাত্রীর এমন নৃশংসতার শিকার হওয়া কারও কাম্য নয়। এ অবস্থায় অন্য শিক্ষার্থীরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানান শিক্ষার্থীরা। তারা হামলাকারী বদরুলের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেছেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা।
সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম জানান, একজন শিক্ষার্থী উপর এমন বর্বর ও পৈশাচিক হামলা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না। এমন অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত। দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিত করলে এমন ঘটনার পুণরাবৃত্তি হবে না।
এদিকে, একই দাবিতে মঙ্গলবার ঘটনাস্থল এমসি কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। অন্যদিকে, হামলার ঘটনায় আহত খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস বাদি হয়ে শাহপরাণ থানায় বদরুলকে একমাত্র আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। বদরুল বর্তমানে পুলিশ প্রহরায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
শাহপরাণ থানার ওসি শাহজালাল মুন্সী জানান- গত সোমবার বিকেলে হামলার পর শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন উত্তমমাধ্যম দিয়ে বদরুলকে পুলিশে সোর্পদ করেন। মারধরে বদরুল আহত হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সুস্থ হলেই তাকে আদালতে তোলা হবে।
অপরদিকে, সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজা বেগম নার্গিসের উপর হামলার অভিযোগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই সাথে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও। মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমিনুল হক ভুইয়া। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা রাশেদ তালুকদারকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার বিকেলে পরীক্ষা থেকে বের হওয়ার পর এমসি কলেজ কেন্দ্রের ভেতর কথিত প্রেমিক বদরুল আলম ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে সিলেট সরকারি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থী খাদিজা বেগম নার্গিসকে। পরে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর উপস্থিত শিক্ষার্থীরা গণধোলাই দিয়ে হামলাকারী বদরুলকে পুলিশে সোর্পদ করেন। বদরুল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও অর্থনীতি বিভাগের শেষ বষের্র শিক্ষার্থী। তিনি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মনিরজ্ঞাতি গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে।
বিডি প্রতিদিন/০৪ অক্টোবর ২০১৬/হিমেল