রোগীর স্বজনদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়াকে কেন্দ্র করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের ডাকে বুধবার দুপুর ২টা থেকে তারা ধর্মঘট শুরু করেছেন।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম রফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ইন্টার্নদের সঙ্গে বসার চেষ্টা করছি। যত দ্রুত সম্ভব সমস্যার সমাধান করা হবে।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের নেতারা জানান, হাসপাতালের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজশাহী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র জনি আহমেদ। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে দেখতে ওই ওয়ার্ডে তার ১৩ জন বন্ধু যান। ওই ওয়ার্ডে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন রামেক ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম অপু।
তিনি তাদের সবাইকে দ্রুত ওয়ার্ড ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু কয়েকবার অনুরোধের পরেও তারা যাচ্ছিলেন না। এক পর্যায়ে মনিরুল ইসলাম নামে জনির এক সহপাঠী অপুকে বলেন, ‘ওই ব্যাটা তুই কে?’ এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে ইন্টার্ন চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম অপুকে লাঞ্ছিত করেন মনিরুল ইসলাম।
এ ঘটনার পর ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের নেতারা রামেক হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে দেখা করে কলেজছাত্র মনিরুলের গ্রেফতার দাবি করেন। এ সময় হাসপাতালের পরিচালক তাদের আশ্বাস দেন, বুধবার সকাল ১০টার মধ্যেই এ বিষয়ে থানায় মামলা করা হবে। তখন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করবে।
কিন্তু বুধবার দুপুর পর্যন্ত হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পরে দুপুর ১টায় ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের নেতৃবৃন্দ আবারও হাসপাতাল পরিচালকের সঙ্গে দেখা করে মনিরুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। তবে হাসপাতাল পরিচালক এ সময় তাদের কাছে আরও একদিন সময় চান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের নেতৃবৃন্দ ধর্মঘটের ডাক দেন।
এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘আমরা বিষয়টি গভীরভাবে ভাবছি। থানায় অভিযোগ বা মামলা করা হবে কী না, সে ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আইনশৃক্সখলা বাহিনীকে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।’
নগরীর রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমান উল্লাহ জানান, এ বিষয়ে থানায় লিখিতভাবে কোনো অভিযোগ হয়নি। তবে তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে অভিযুক্ত মনিরুল ইসলামকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ওয়ার্ডে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন রামেক ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম অপু। তিনি বলেন, ‘এটি কোনো দলের আন্দোলন নয়। এটি ইন্টার্নদের নিরাপত্তার জন্য আন্দোলন। এ আন্দোলনে সবাই সঙ্গে আছেন। মনিরুলকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত কোনো ইন্টার্ন চিকিৎসক ওয়ার্ডে যাবেন না।’
বিডি-প্রতিদিন/ ০৫ অক্টোবর, ২০১৬/ আফরোজ