দীর্ঘ ৪ বছর পর আসছে ডিসেম্বরে ঘোষণা হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি। আসন্ন কমিটিকে ঘিরে ক্যাম্পাসের ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে চলছে নানা গুঞ্জন। তবে নতুন কমিটিতে জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কেন্দ্র যাদের জন্য সুপারিশ করেছেন তাদের কারোরই ছাত্রত্ব নেই এবং অধিকাংশই বিতর্কিত বলে জানা গেছে। তাছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছেন, জাবি শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব আসন্ন কমিটিতে বৈধ ও যোগ্যদেরকে সামনে নিয়ে আসছেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সিদ্দিকুর রহমান জানান, শুধুমাত্র ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ (৪০ ও ৪১তম ব্যাচ) থেকে পরবর্তী ব্যাচগুলোর শিক্ষার্থীরা নিয়মিত এবং বৈধ হিসেবে অধ্যয়নরত। ছাত্রত্ব বিষয়ে রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী পরপর দুইবার স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় অংশ না নিলে তার ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যায়। এটা সব শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য। তবে বড় কোনো কারণ বা সমস্যা থাকলে একাডেমিক সভায় বিশেষ বিবেচনার সুযোগ থাকে।”
ফলে পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে সহ-সভাপতি ৩৮তম ব্যাচের আরিফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিঠুন কুমার কুন্ডুর ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে গেছে। এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক মোর্শেদুর রহমান আকন্দেরও ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেছে।
এছাড়া, ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের (৩৯তম ব্যাচ) পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে আইন বিষয়ক সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চল, উপ-অর্থ সম্পাদক জুয়েল রানা, সমাজ সেবা বিষয়ক সম্পাদক মিনহাজুল আবেদীন, সহ-সম্পাদক তানভীর হাসান খান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম লিমনের বৈধ ছাত্রত্ব নেই। তবে আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল সাধারণ সম্পাদক এনামুল হাসান নোলকের ছাত্রত্ব আছে।
প্রার্থীদের মধ্যে মোর্শেদুর রহমান আকন্দের বিরুদ্ধে আবাসিক হল থেকে অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার, বৈধ ছাত্রদের হলে উঠতে না দেওয়া, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সিদ্ধান্ত অমান্য করা, প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীদের মারধর এবং মিছিলে না যাওয়ায় হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের রুমে তালা লাগিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চলের বিরুদ্ধে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলে ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের ‘সুসময়ের বন্ধু’ হিসেবে পরিচিত এই নেতার বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্রদের মারধর, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গাড়ি ভাঙচুর ও হলে মাদকসেবীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক মিঠুন কুমার কুন্ডুর বিরুদ্ধে ২০১২ সালে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীদের মারধর, ছাগল চুরি, রিকশাচালককে জুতা পেটাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলাম আরিফের বিরুদ্ধে নিজ দলের নেতাকর্মীদের হলের ছাদ থেকে ফেলে দেয়া, শহীদ মিনার অবমাননা, হলের ক্যান্টিনে ফাও খাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
তবে এসব বিষয়ে অভিযুক্তদের কাছে জানতে চাইলে তারা প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এদিকে, যদি অছাত্র ও বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের (৩৮তম ব্যাচ) ও ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের (৩৯তম ব্যাচ) ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বাদ পড়লে নিয়মিত ছাত্র ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের (৪০তম ব্যাচ) ও ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের (৪১তম ব্যাচ) ছাত্রলীগ নেতারা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতে পারবেন।
সার্বিক বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, “পদ পাওয়ার দিক দিয়ে কে এগিয়ে আছে তা দেখা হবে না বরং ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যারা নিয়মিত এবং পরিচ্ছন্ন নেতাকর্মী, যাদের বিরুদ্ধে বিতর্ক নেই তাদেরকে নিয়েই কমিটি গঠন করা হবে।”
বিডি-প্রতিদিন/২৮ নভেম্বর, ২০১৬/মাহবুব