ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেছেন, এখন ধ্বংসের নতুন হাতিয়ার মাদক। দংশনের নতুন হাতিয়ার। যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়া, বাবা-মায়ের অতি ব্যস্ততা, ব্যক্তি স্বাতন্ত্রের নামে সন্তানের অতি ফ্যাশনকে প্রশ্রয় দেওয়া নতুন প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এগুলোই তাদেরকে ধীরে ধীরে ঠেলে দিচ্ছে ইয়াবার মতো মাদকের দিকে।
শনিবার রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ প্রতিদিন আয়োজিত 'মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
ঢাবির এ অধ্যাপক বলেন, ছোটবেলা থেকে আমরা নীতি ও আদর্শ পরিবার, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছি। এখন পরিবারগুলো কি সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে? যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবারে চলে এসেছি। এই একক পরিবারে আমরা সন্তানকে কতটুকু সময় দিচ্ছি? সবাই আমরা বস্তুবাদে নিমজ্জিত। চাকচিক্যের প্রতিযোগিতায় দৌঁড়াতে গিয়ে আমরা কি সৎ পথে উপার্জন করছি? মেয়ের আবদার রাখতে তাকে ঈদে ২০ হাজার টাকা দিয়ে লেহেঙ্গা কিনে দিচ্ছি! স্ত্রীকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে শাড়ি কিনে দিচ্ছি! এসব করতে গিয়ে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের মানসিকতাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি? তাদেরকে উচ্চাভিলাষী করে তুলছি। আজ একটা ছেলে বা মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় সুযোগ পেয়েও সন্তুষ্ট হতে পারছে না। তার মধ্যে হতাশা কাজ করছে। কারণ তার বন্ধু চাকচিক্যময় রঙচঙা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। সে মনে করছে ঢাবি, বুয়েটে পড়াশুনা করে দরিদ্র ও দুস্থ ঘরের ছেলেমেয়েরা! এই ধরণের চিন্তা তার মধ্যে ভোগবাদ, পুঁজিবাদ ও বৈষম্য তৈরি করছে।
তিনি বলেন, আগে প্রেমে ব্যর্থ হলে মানুষ আত্মহত্যা করতো। এখন বলছে হৃদয় অনেক বড়। ব্যর্থতার সুযোগ নেই। এক মন যতজনকে পারো দাও। যাকে আমরা বলছি 'লিকুইড লাভ'। ভালবাসার ধরণ বদলাচ্ছে। মাদকেরও ধরণ বদলাচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের মধ্যে গণসচেতনতা তৈরি হয় পরিবার থেকে। এখনকার ছেলে-মেয়েদের এক পা থাকে আমেরিকায়, আরেক পা ইংল্যান্ডে। তারা পরিবার থেকে নীতি শিক্ষা নেবে কেন? এখন অনেক বাবা-মা সন্তানের খোঁজও রাখেন না। সে কার সঙ্গে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে সেগুলো নিয়ে তারা মাথা ঘামায় না। এখন 'ব্যক্তি স্বাতন্ত্রের যুগ'। অত্যন্ত ফ্যাশনের বিষয় এটা। পশ্চিমাদের থেকেই দেখেছি এই অতি ফ্যাশন সংসার ও সমাজ থেকে সুখ তুলে নিয়েছে। বন্ধনগুলো আলগা হয়ে গেছে। মাদকের ব্যাপারে আরও কঠোর হতে হবে। ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট দিতে হবে। একইসঙ্গে পরিবারগুলোকেও সচেতন হতে হবে সন্তানদের ব্যাপারে। না হলে এই নিষিদ্ধ বস্তুর ভয়াবহ মারণছোবল থেকে নতুন প্রজন্মকে রক্ষা করা যাবে না।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ