দুই শ্রমিক আটকের ঘটনায় শনিবার সকাল ৬টা থেকে সিলেট জেলায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন জেলা মাইক্রোবাস শ্রমিক নেতারা। এর আগে শুক্রবার রাতে শ্রমিকরা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে ভাংচুর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শুক্রবার রাত ৯টার দিকে দুই শ্রমিককে আটকের জেরে নগরীর উপশহর পয়েন্ট এলাকায় সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় শ্রমিকরা মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন গাড়ি ভাংচুর করে। বাধা দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কয়েক রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোড়ে।
এদিকে, শ্রমিকদের ইটের আঘাতে দুই পুলিশ আহত হয়েছেন। তারা হলেন পুলিশের উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) জৈন উদ্দিন ও কনস্টেবল সুজন মিয়া। সংঘর্ষে শ্রমিকদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে দাবি শ্রমিক নেতাদের।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুই পরিবহন শ্রমিককে চার লিটার মদসহ আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের ছাড়িয়ে নিতে শফিক মিয়া নামে এক চালক প্রথমে তার পিকআপ দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে পুলিশের গতিরোধ করে।
এসময় পুলিশ তাকে লাঠিপেটা করে আটকদের উপশহর ‘ই’ ব্লকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। তৎক্ষণিক আটকদের ছাড়িয়ে আনতে ২/৩টি হিউম্যান হলার যোগে কতিপয় শ্রমিক ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে কাচ ভাংচুর করে। এরপর শ্রমিকরা ফের উপশহর পয়েন্টে এসে সড়ক অবরোধ করে ভাংচুর চালায়।
শ্রমিকদের সড়ক অবরোধের কারণে নগরীর মেন্দিবাগ, উপশহর, সুবহানীঘাট, শাহজালাল (র.) সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে নগরীতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। শ্রমিকরা রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স চলাচলেও বাধা সৃষ্টি করে।
শ্রমিকদের দাবি, ‘দু’জনকে আটকের বিষয়টি জানতে তারা ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে হাজির হলে তাদের কাছে টাকা চাওয়া হয় এবং মারধর করা হয়। পরে উপশহর শাহজালাল সেতু সংলগ্ন এলাকায় এসেও ট্রাক ও মাইক্রোবাস শ্রমিকদের মারধর করেন গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় কয়েকটি গাড়িও ভাংচুর করেন তারা’।
উপশহর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপশহর রোজভিউ হোটেলের সামনে পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের সময় পুলিশের গাড়িসহ ১০/১২টি ট্রাক ও মাইক্রোবাস ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এসএম রুকন উদ্দিনসহ পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা। ঘটনাস্থল থেকে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার সময় আটক দুই শ্রমিক ও মদসহ আটকদের ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানান।
এসময় বদর উদ্দিন আহমদ কামরান শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে মারামারির সময় আটক দুই শ্রমিককে তার জিম্মায় ছাড়িয়ে আনার আশ্বাস দিয়ে অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য শ্রমিকদের আহ্বান জানান।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এসএম রুকন উদ্দিন বলেন, মদসহ যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের ছাড়া যাবে না। তবে পুলিশের সঙ্গে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় আটকদের ছেড়ে দেয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭/ফারজানা