সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে মনের টানে বাংলাদেশ এসে বরিশালের উচ্চ শিক্ষিত যুবক কাইয়ুম আহম্মেদকে বিয়ে করেছেন নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড সিটির বাসিন্দা হাফিজা আহম্মেদ ফ্যালেসিয়া। গত শনিবার রাতে নগরীর অভিজাত বরিশাল ক্লাব লিমিটেডের হল রুমে মহাধুমধামে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। এদিন রাতে বিবাহত্তোর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ১ হাজার আগত অতিথিকে আপ্যায়িত করা হয়।
এর আগে গত ২৩ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ১০ হাজার ১ ডলার দেন মোহরে ইসলাম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী কাইয়ুম ও ফ্যালেসিয়ার আকদ সম্পন্ন হয়। আকদের আগে ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বি সামান্থা ফ্যালেসিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তার নতুন নাম রাখা হয় হাফিজা আহম্মেদ ফ্যালেসিয়া।
বরিশাল নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দা আলতাফ স্কুল রোডের মৃত আলহাজ আহম্মেদ আলী হাওলাদার ও মোছা. ফিরোজা বেগম দম্পত্তির ৬ ছেলে মেয়ের মধ্যে পঞ্চম কাইয়ুম। ২০০৫ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দেন। সেখানকার ইউনিভার্সিটি অব বালারাত থেকে প্রফেশনাল একাউন্টিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সম্পন্ন করে গত ৬ বছর ধরে মেলবোর্নের হ্যালো ওয়ার্ল্ড লিমিটেড কোম্পানিতে একাউন্টস্ টিম লিডার পদে চাকুরি করছেন কাইয়ুম।
অপরদিকে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড সিটির রুবেন ড্যান ও প্রয়াত ট্যান ইন ডিয়ক দম্পত্তির ৪ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ফ্যালেসিয়া অকল্যান্ডের গ্লেন ফিল্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাশ করার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য যান প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে লেখা পড়া শেষে গত ৩ বছর আগে চাকুরি নেন মেলবোর্নের হ্যালো ওয়ার্ল্ড লিমিটেড কোম্পানির প্রকিউরমেন্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে। একই প্রতিষ্ঠানে চাকুরির সুবাদে কাইয়ুম ও ফ্যালেসিয়ার মধ্যে পরিচয় এবং জানা শোনা হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঘনিষ্টতা বাড়ে। ধীরে ধীরে মেলবোর্নে অন্যান্য বাংলাদেশী বিশেষ করে কাইয়ুমের ঘনিষ্ট বরিশালের অনেকের সাথে পরিচয় হয় ফ্যালেসিয়ার। তাদের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে এবং ইন্টারনেটসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের অপরূপ প্রকৃতিক সৌন্দর্য্যে সবুজে ঘেরা এই দেশকে ভালোবেসে ফেলেন ফ্যালেসিয়া। এক পর্যায়ে তাদের সম্পর্ক গড়ায় প্রনয় পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত দুই পরিবারের সন্মতিতে তাদের বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়। বিয়ের প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণ করতে গত ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলেন কাইয়ুমের পরিবারের একাধিক সদস্য।
শ্বশুর বাড়ি আয়োজিত বিবাহত্তোর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গত ৪ মার্চ প্রথমবারের মতো স্বামীসহ বাংলাদেশে আসেন ফ্যালেসিয়া। গত কয়েকদিনে শ্বশুর বাড়ি অর্থাৎ বরিশালের মানুষের ভালবাসা তাকে আপন করে নিয়েছে।
গত শনিবার রাতে নগরীর বরিশাল ক্লাব লিমিটেডের হলরুমে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ফ্যালেসিয়াকে বেশ হাস্যোজ্জ্বল দেখা গেছে। আগত অতিথিরা নব দম্পত্তির সাথে ছবি তোলেন এবং তাদের আর্শিবাদ করেন। এ সময় শুদ্ধ বাংলায় ‘আস সালামু আলাইকুম’ বলে আগত অতিথিদের স্বাগত জানান বিদেশিনী নববধূ হাফিজা আহম্মেদ ফ্যালেসিয়া।
বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে তিনি মুগ্ধ ও বিমোহিত। এ দেশের মানুষ খুবই সহজ-সরল। তাদের মধ্যে অহংকার-বড়াই নেই। তারা খুবই আন্তরিক এবং অতিথিপরায়ণ।
ফ্যালেসিয়া বলেন, বাংলাদেশ খুবই নিরাপদ দেশ। এখানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে তাদের কোন অস্বস্তি নেই। বরিশালে শ্বশুর বাড়ি হওয়ায় বেজায় খুশী তিনি। এই দেশের মানুষের ভালোবাসার টানে তিনি বারবার বাংলাদেশে ফিরে আসবেন এবং গ্রাম বাংলার সবুজ প্রকৃতি উপভোগ করবেন।
ফ্যালেসিয়ার স্বামী কাইয়ুম আহম্মেদ বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে বিদেশীদের নেতিবাচক ধারণা পাল্টানোর সময় এসেছে। বাংলাদেশ ভ্রমণে যেসব দেশের নিরাপত্তা সতর্কতা রয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করা উচিত বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক কাইয়ুম।
কাইয়ুমের বড় বোন সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র আয়শা তৌহিদ লুনা বলেন, ফ্যালেসিয়া ভাংগা ভাংগা বাংলায় কথা বলতে শিখেছেন। পরিবারের সকল সদস্যের সাথে গত কয়েক দিনে তার চমৎকার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সে শ্বশুর বাড়ির সকলকে আপন করে নিয়েছেন। বিদেশিনী বধূর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আশপাশের বহু মানুষ তাকে দেখতে তাদের বাড়ি ভিড় করছে বলেও জানান লুনা।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ফ্যালেসিয়ার বাবা ও মা দুইজনই ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক ছিলেন। পরবর্তীতে তারা স্ব-পরিবারে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড সিটিতে বসবাস শুরু করেন এবং তারা নিউজিল্যান্ডের নাগরিকত্ব পান। পড়াশোনা এবং চাকুরির সুবাদে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমানো ফ্যালেসিয়া পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। পড়াশোনার সুবাদে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া কাইয়ুমও অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক হয়েছেন কয়েক বছর আগে। আগামী ১৯ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন নব দম্পত্তি। পথিমধ্যে ৪ দিন থাইল্যান্ড অবস্থান করবেন তারা।
বিডি-প্রতিদিন/১২ মার্চ, ২০১৭/মাহবুব