রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেছেন, ‘৫ বছরের সব সমস্যা আগামী ১৫ মাসের মধ্যে সমাধানে উদ্যোগ নেবো। সরকার আমাকে সাহায্য করলে আমি অসমাপ্ত সব কাজ করতে পারবো। যে ১৬ মাস দায়িত্ব পালন করেছি, তখনও সহযোগিতা পেয়েছিল। স্থানীয় সরকারকে অবজ্ঞা করে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারে না। তাই আগামীতেও সরকারের সহযোগিতা পাবো।’
বুধবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে নগর ভবনে এসে নিজ চেয়ারে বসে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
এর আগে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল অটোরিকশায় চেপে নগর ভবনে আসেন। বুধবার বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে উপশহর মোড় থেকে অটোরিকশায় নগর ভবনের উদ্যোশে রওনা হন। এসময় তার সঙ্গে শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
২৩ মাস মেয়রের দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত থাকার পর গত রবিবার সকালে রাসিকে আসেন বুলবুল। কিন্তু নগর পিতার কক্ষ তালাবদ্ধ। এর ফলে তিনি পাশের একটি কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ নিয়ে নগর ভবন এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে এই উত্তেজনা ভাঙচুরে রূপ নেয়। রবিবার বেলা তিনটার দিকে বুলবুল সিটি করপোরেশনে তার কক্ষে বসেন। এর পর পরই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ফ্যাক্সে তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ আসে।
মঙ্গলবার বুলবুল তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশ স্থগিত করেন। ফলে বুধবার আবারও নগর ভবনে ফেরেন তিনি। তবে এদিন তাকে বাধা পেতে হয়নি। নগর ভবনে আসা মাত্র বিপুল সংখ্যক কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারী তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। খোলা রাখা হয়েছিল মেয়রের দফতরের প্রধান ফটকটি। কোনো ধরনের বাধাবিপত্তি ছাড়া মেয়রের কক্ষে প্রবেশ করেন তিনি। মেয়রের চেয়ারে বসার আগে দোয়া পড়েন, মোনাজাত করেন।
গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে মেয়র বলেন, আজ যে কারণেই হোক দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক, সামাজিক, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে বিবর্ণ অবস্থায় দেখেছি। আমরা চাই এ গণতন্ত্র সুস্থ সবল এবং গ্রীন সিটির মতো হোক। আমরা চাই এ গণতন্ত্র সাধারণ মানুষের কাছে শ্রদ্ধার একটা জায়গা তৈরি হোক। আমরা চাই রাসিকের যে ঐতিহ্য তা ফেরত আনা। গত ২ বছরে রাসিকের নিয়মকে ভেঙে রাসিককে একটা অচল অবস্থার তৈরি করা হয়েছে। আগামী ১৫ মাসে এ অচলাবস্থার অবসান করা হবে, আর এটাই আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
তিনি বলেন, আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে এই সিটি করপোরেশনে একটা সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা। যে সম্পর্ক নষ্ট হয়েছিল, যে সম্পর্কে ঘুনে ধরেছে সে সম্পর্ক তৈরি করা। এই রাজশাহীতে আবার স্বৈরাচারী মনোভাব ছেড়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করা। এটিই হবে আমার বড় চ্যালেঞ্জ। রাসিকের উন্নয়ন, সেবা, স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাত অন্যান্য জায়গায় যদি কোন দূর্বলতা থাকে, সেগুলো খুঁজে সবাইকে জানানো হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাসিকের কোন নাগরিক সেবা মুক্ত হবে না। আগামী ১৫ মাসে আামার যদি চারগুণ পরিশ্রম করতে হয়, তবে সে পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে সেটিকে পাঁচ বছর বানানোর চেষ্টার করবো।
সরকারের কাছে কেমন সহযোগিতা আশা করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের কাছে অবশ্যই সহযোগিতা পাবো। যেহেতু আমি ১৬ মাস দায়িত্ব পালন করেছি। আমার বিশ্বাস আগামী ১৫ মাসেও আমি সে সহযোগিতা পাবো। একারণেই পাবো যে, স্থানীয় সরকারকে অবমূল্যায়ন করে কেউ কখনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকতে পারে না। আমার কর্মের মধ্যে দিয়ে, সততা এবং নিষ্ঠার মধ্য দিয়ে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাব। আমাদের সবার পরিশ্রম বাড়িয়ে দিব এবং আগামী ১৫ মাসকে ৫ বছরের সময়কে বেধে নিয়ে আমাদের কাজ পরিচালনা করব।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ