জলাবদ্ধতা দূর করাসহ সামগ্রিক নগর উন্নয়নে চট্টগ্রামে একজন সমন্বয়কারি দরকার। খাল দখল করে নির্মিত শহরের ১৩৯টি ভবন বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গতে দেয়া সুপ্রীম কোর্টের রায়ের আলোকেই ভাঙ্গতে কোন বাধা নেই। চট্টগ্রাম উন্নয়নে মহানগরের সংসদ সদস্যের সমন্বিত উদ্যোগ নেই, অথচ তা জরুরি। চসিকের সাথে চউকের সমন্বয় নেই, যা অপরিহার্য।
‘জলাবদ্ধতা রোধে নাগরিক করণীয়’ শীর্ষক মুক্ত নাগরিক সংলাপে আলোচকগণ এমনটি বলেন। এতে একই দিনে একই দেশের মানুষের ভোটে নির্বাচিত ঢাকার দুইমেয়র মন্ত্রী মর্যাদা পেলেও, এমনকি নারায়নগঞ্জ আর অন্য কোন কোন শহরের মেয়কে প্রতিমন্ত্রী আর উপমন্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হলেও চট্টগ্রামের মেয়রকে এখনো ন্যায্য মর্যাদা না দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করা হয়।
মুক্তসংলাপে আলোচকগণ নগর উন্নয়নে চট্টগ্রামে সমন্বয়কারি হিসেবে জনপ্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে মেয়রকেই দায়িত্ব নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন। এলক্ষে প্রয়োজনে আইনি ভিত্তি দিয়ে মেয়রকে দায়িত্ব প্রদানের দাবি ওঠে। মুক্ত সংলাপটিতে এক টেবিলে বসে জলাবদ্ধতা সংকটের সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেছেন তিনজন ভিসিসহ শিক্ষাবিদ সাংবাদিক স্থপতি প্রকৌশলী, সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন পেশার নাগরিক প্রতিনিধিগণ। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক), চট্টগ্রাম ওয়াসার নগর পরিকল্পনাবিদ, প্যানেলমেয়র, জলাবদ্ধতা স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যানসহ দায়িত্বশীলরা। জলাবদ্ধতার সংকট তারা চিহ্নিত করে সমাধানের পথ বাতলে দিয়েছেন কিছু পরামর্শ আর প্রস্তাবনায়।
শনিবার সকালে থিয়েটার ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রামে (টিআইসি) আয়োজক সংগঠন চট্টগ্রাম নাগরিক উদ্যোগের আহবায়ক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় এতে কী নোট উপস্থাপন করেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সাদার্ণ ইউনিভার্সিটির উপউপাচার্য প্রকৌশলী আলী আশরাফ।
আলোচনায় অংশ নেন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়( চুয়েট)র উপাচার্য প্রকৌশলী ড. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, চট্টগ্রাম বিজ্জান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয়(ইউএসটিসি) উপাচার্য প্রফেসর ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর এড. রানা দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সেলিম জাহাঙ্গীর, বিএমএ’র সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড. মুজিবুল হক,চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ.কে.এম ফজলুল্লাহ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদুল ইসলাম খান, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) প্রকৌশলী নাজমুল হক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি শাহীনুল ইসলাম, , চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড. মুজিবুল হক, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, সম্মিলিত সাংষ্কৃতিক জোট চট্টগ্রামের সদস্য সচিব নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক অঞ্চল চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক প্রদৗপ খাস্তগীর প্রমুখ।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রকৌশলী ড. রফিকুল আলম বলেন, আইনের বাধ্যবাধকতা ছাড়া কোন সমন্বয় সম্ভব নয়। তাই আইনগত কাঠামোতে সমন্বয় সম্ভব হলে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।
ইউএসটিসি’র উপাচার্য প্রফেসর ড. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, নগরীর খাল নালাগুলোর বর্তমান ধারণ ক্ষমতা, দিনের বেলায় শহরের লোকসংখ্যা নির্ধারণ ও তার প্রভাব চিহ্নিতকরণে একটি রেপিট সার্ভে করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা বহুমাত্রিক সমস্যা। ভূ-প্রাকৃতিক কারণে অবস্থান এবং জলবায়ু পরিবর্তন এ্ই সমস্যার ক্ষেত্রে প্রভাব রাখে।
আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যালের প্রসিকিউটর এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, আমাদের পরিকল্পনা আছে কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। সমাধানের পথ বাতলে দেওয়া হয়েছিল ১৯৯৫ সালে প্রণীত নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে মহাপরিকল্পনা গত বাইশ বছরেও হল না কেন? এর বাধা কোথায়? যে কোন সমন্বিত উদ্যোগ বাস্তবায়নে একজন প্রধান সমন্বয়কারী দরকার।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ.কে.এম ফজলুল্লাহ বলেন, মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের সময় সকল সংস্থাকে যুক্ত করার চেষ্টা হয়। ১৯৮৮ সালের আগে চট্টগ্রাম ওয়াসায় ওয়াল্ড ব্যাংক আসেনি। তারপরেও আমরা একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ণ করতে পেরেছি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাটালের অধ্যক্ষ প্রফেসর সেলিম মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চাই সমন্বিত উদ্যোগ ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা। এ জন্য শুধুমাত্র কোন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোন সরকারি ও আধা সরকারি সংস্থাকে দায়ী করা যাবে না।
নগর পরিকল্পনাবিদ ও সাউর্দান ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য্য প্রকৌশলী আলী আশরাফ বলেছেন, চট্টগ্রামে ১৯৬৫ সাল থেকে জলাবদ্ধতার সমস্যা ছিল। আমেরিকার মিসিগিনির একটি সংস্থার রির্পোটে এই তথ্য দেওয়া আছে। ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সামনে রাস্তায় ৩ ফুট পানি দাড়িয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন ও উন্নয়নের জন্য ওয়াসা ও সিডিএর একাধিক মহাপরিকল্পনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি শাহীনুল ইসলাম বলেছেন, চট্টগ্রাম শহর পানিতে ডুবে থাকলে দেখা গেছে খালের মুখে পাঁচশ গজের মধ্যে কোন পানিপ্রবাহ নেই। প্রায় প্রতিটি মুখগুলোতে ৫-১০টি অবৈধ স্থাপনা আছে। এই অবৈধ স্থাপনার তালিকা আমাদের কাছে আছে। কিন্তু স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। এর অন্যতম কারণ হলো আমাদের কাছে ম্যাজিষ্ট্রেসি পাওয়ার নেই। আমরা প্রায় রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ি।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার