“প্রতিটি নারী শিশুই প্রতিনিয়িত যৌন নিপীড়নের অভিজ্ঞতা নিয়ে বড় হচ্ছে। সেই নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশিত হলে আরও বড় ধরণের বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে কিংবা লোক-লজ্জার সম্মুখীন হতে হবে সেই ভয়ে তারা খবরটা বাইরে প্রকাশ করতে চায় না। কিন্তু নিপীড়নের জগতে এই নিরবতা ভাঙাই হচ্ছে বড় লড়াইয়ের কাজ।”
রবিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থী কর্তৃক আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে এসব কথা বলেন জাবির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ।
‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ এই ব্যানারে দেশব্যাপী চলমান যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার স্লোগানকে সামনে রেখে এর আয়োজন করা হয়। সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল। এরপর টারজান পয়েন্ট, মুরাদ চত্বর, পরিবহন চত্বর প্রদক্ষিণ শেষে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনের মুন্নি চত্বরে গিয়ে এটি শেষ হয়।
মুরাদ চত্বরে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, “নিপীড়ন বন্ধ করার জন্য নিপীড়নকারীদের মুখোশ সমাজের সামনে তুলে ধরতে হবে। তার জন্য যারা নিপীড়নের শিকার হন তাদেরকে নিরবতা ভঙ্গ করতে হবে। আর সেটি না করলে দুর্বৃত্তদের জন্য সুবিধা হয়। কারণ দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করতে না পারলে তাদের ভালো মানুষী যে মুখোশ সেটা থেকে যায়। এই মুখোশ নিয়ে তারা পরবর্তীতে বড় বড় পদে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নিপীড়নের কাজ অব্যাহত রাখে।
তিনি বলেন, বনানীতে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে শুধুমাত্র এই নিরবতা ভঙ্গ করার কারণে। যারা নিজেদের ঝুঁকি নিয়ে এই সাহসী কাজটি করেছেন তাদেরকে আমি সাধুবাদ জানাই। কারণ নিরবতা ভঙ্গ না করলে এই দুর্বৃত্তরা তাদের অপকর্ম চালিয়েই যেতো। পাশাপাশি এদের মতো দুর্বৃত্ত আরো যারা আছে তারাও নিজেদেরকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে মনে করতো। তারা ভাবতো- যা খুশি তাই করা যাবে কেউ তাদের কিছু করতে পারবে না। বনানীর ঘটনায় যে দু'জন আক্রান্ত হয়েছে তাদের লড়াইটা মূলত এখনই শুরু হবে। তারা যখন মামলা-আদালত এসবের ভিতর দিয়ে যাবে আবারো তাদেরকে নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হবে।”
যারা প্রতিনিয়ত নিপীড়নের শিকার হন তাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা যারা এইসব নিপীড়ন, অন্যায়, যৌন হয়রানী কিংবা অন্য আরো যে কোনো ধরণের নিপীড়নের শিকার হবেন তারা নিজেদের ঝুঁকি জেনে হলেও অন্যদের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, দেশের সকলের কথা ভেবে নিরবতা ভেঙ্গে প্রতিবাদ জানাবেন।”
তিনি আরও বলেন, “ধর্ষণের জন্য যারা নারীদের পোশাক ও বাইরে বের হওয়ার সময় নিয়ে প্রশ্ন তোলে তারাও এসব ধর্ষকদেরই সহযোগী হিসেবে কাজ করে।”
এছাড়া সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা (নৃবিজ্ঞান), অধ্যাপক এ এস এম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া (দর্শন) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম (ইতিহাস), সহকারি অধ্যাপক আনিছা পারভীন জলী (ইতিহাস), সহকারি অধ্যাপক খন্দকার হালিমা আখতার (নাটক ও নাট্যতত্ত্ব)ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
বিডি-প্রতিদিন/১৪ মে, ২০১৭/মাহবুব