বকেয়া বেতন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা না পাওয়া পর্যন্ত লাগাতার কর্মবিরতী অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশণের (বিসিসি) আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কর্মবিরতীর ১০ম দিন আজ মঙ্গলবার বিকেলে নগর ভবনের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় আন্দোলনকারীরা বলেন, আন্দোলন চললেও নগরবাসীর দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বিদ্যুৎ, পানি ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম অব্যাহত থাকছে। এদিকে দাবি আদায়ের আন্দোলনে নগরবাসীর সহযোগীতা চেয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
গত সোমবার বিকালে মেয়র আহসান হাবিব কামাল সাংবাদিক সম্মেলন করার ২৪ ঘণ্টা পর একই স্থানে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করে আন্দোলনকারীরা বলেন, সাংবাদিক সম্মেলনে মেয়র কামাল মিথ্যাচার করেছেন এবং সাংবাদিকদের অসত্য তথ্য দিয়ে নগরবাসীর মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছেন।
মেয়রের বক্তব্য মিথ্যা প্রমান করতে ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বিসিসি’র রাজস্ব আয় এবং ব্যয়ের তথ্য সাংবাদিক সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে উপস্থাপন করেন আন্দোলনকারীরা। এতে দেখা যায়, রাজস্ব আয় দিয়ে বিসিসির যাবতীয় ব্যয় মিটিয়ে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৯ কোটি ৪১ লাখ ১৩১ টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ২৬ কোটি ২৮ লাখ ৫৭ হাজার ২৮ টাকা উদ্বৃত ছিল।
আন্দোলনকারীরা বলেন, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ এ ৭০, ৭১ ও ৭২ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে তহবিলের অর্থ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করপোরেশণের জনবলের বেতন-ভাতায় ব্যয় হবে। বিসিসি মেয়র কামাল ওই আইন লঙ্ঘন করে রাজস্ব আয়ের টাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারী বিল দিচ্ছেন। এর পেছনে ঠিকাদারদের সঙ্গে মেয়র কামালের কমিশন বাণিজ্য রয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। এছাড়া গোপন দরপত্র আহ্বান সহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করে মেয়র কামাল বিসিসি তহবিল শূন্য করে এর দায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর চাপানোর চেস্টা চালাচ্ছেন।
মতবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিসিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান। পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা দিপক লাল মৃধা, কর আদায় শাখার কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন ও নূর খান সহ বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগের বিষয়ে মেয়র আহসান হাবিব কামাল টেলিফোনে বলেন, ‘রাজস্ব আয় দিয়ে উন্নয়ন কাজ হচ্ছে- এমন প্রমাণ দিতে পারলে তিনি পদত্যাগ করবেন। নগর ভবনে প্রায় ১ হাজার ১শ’ ৬ জন অতিরিক্ত জনবল রয়েছে। অতিরিক্ত জনবল আর রাজস্ব ঘাটতির কারণেই বকেয়া পড়েছে। তারপরও আগামী জুনের মধ্যে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। কিন্তু আন্দোলনকারীরা শুনছে না। বিষয়টি মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসনিক অন্যান্য দপ্তরকে জানানো হয়েছে বলে জানান মেয়র কামাল।
উল্লেখ্য, স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৫ মাসের বেতন ও ২৩ মাসের প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং অস্থায়ী শ্রমিকদের ৩ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে বিসিসিতে লাগাতার কর্মবিরতী চলছে।
বিডি প্রতিদিন/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/হিমেল