বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি আগামী নির্বাচনে যেতে চায় মুক্ত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে, নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে। এই দাবিতে সকল রাজনৈতিক দল, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রতি জাতীয় ঐক্য করার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে শনিবার বিকেলে নগরীর বান্দ রোডের হেমায়েত উদ্দিন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
বরিশাল বিভাগীয় বিএনপি আয়োজিত এবং কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর সভাপতি সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারের সভাপতিত্বে সমাবেশে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, মিথ্যা মামলায় কারান্তরীণ খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছেনা সরকার। বেগম জিয়া সরকারি নয়, ব্যক্তিগত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু সরকার তাকে সেই সুযোগ দেয়নি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে কোন আইনের শাসন নেই। দেশে চলছে বুলেটের শাসন। বিনা ভোটে নির্বাচিত সরকার কামান-বন্দুকের উপর ভর করে জোড় করে ক্ষমতায় টিকে আছে। সরকারের সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সকলে রুখে না দাঁড়ালে চিরজীবন আওয়ামী লীগের গোলাম-কৃতদাস হয়ে থাকতে হবে বলে সতর্ক করে দেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান, মহানগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহীনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ খালেদা জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত করেছে। বেগম জিয়া কারান্তরীণ হওয়ার পর নেতাকর্মীরা আরও সক্রিয় হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের অনেকের বিরুদ্ধেই আগামীতে দুর্নীতি মামলা হবে বলে হুশিয়ারী দেন তিনি।
দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মীর্জা আব্বাস বলেন, বাংলাদেশে কোন কিছুই আর আনচ্যালেঞ্জড যাবেনা। সব কিছুই মোকাবেলা করা হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার অন্ধ দুর্নীতিবাজ। তারা দেশ থেকে লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাঁচার করেছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন আগামী ১ মাসের মধ্যে আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে বেগম জিয়াকে মুক্ত করে আনার ঘোষনা দেন।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, ২০ দলীয় জোটের শরীক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম ও বরকতউল্লাহ ভুলু, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, জেলা (দক্ষিন) বিএনপি’র সভাপতি এবায়েদুল চাঁন, উত্তর জেলা বিএনপি’র সভাপতি মেজবাউদ্দিন ফরহাদ, আবুল হোসেন খান সহ কেন্দ্রিয় এবং বিভাগের অন্তর্গত বিভিন্ন জেলার নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল, বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু, কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যুবদল কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন সহ অন্যান্যরা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিএনপি’র প্রবেশের সময় ধারালো দা সহ এক যুবক আটক হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুরো বরিশাল নগরী জুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ কারনে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হয় বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশ।
এর আগে বেলা ১১টার পর থেকে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা এবং মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে দলে দলে মিছিল সহকারে নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেয়।
বিডিপ্রতিদিন/ ই-জাহান