বিমানবন্দর এলাকায় জাবালে নূর পরিবহনের চাপায় দুই শিক্ষার্থীকে হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে আজ রাজধানীর শনির আখড়ায় আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থীর ওপর পিক-আপ ভ্যান উঠিয়ে দেয় চালক। এই ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে ওই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে বলেও শোনা যায়। কিন্তু নিহতের খবর নাকচ করে দিয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলি।
কাজী ওয়াজেদ আলি বলেন, আমরা ঢাকা মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছি। এরকম কোনো খবর পাইনি। আর যে ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে সেটা সম্পর্কেও বলা যাচ্ছে না।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আহত ওই শিক্ষার্থীকে যাত্রাবাড়ীর প্রোঅ্যাকটিভ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালটির ব্যবস্থাপক সালাহউদিন ভূইয়া বলেন, ছেলেটির নাম ফয়সাল। সে নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র। তাঁকে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অবস্থা স্থিতিশীল কিন্তু কোমরে ফ্র্যাকচার রয়েছে। তাঁর চিকিৎসা চলছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার এ কে এম নাসির উদ্দিন জানালেন, আজকে কয়েকজন রোগী এ ধরনের ঘটনায় ইমার্জেন্সিতে ভর্তি হয়েছেন তবে মারা যাওয়ার কোনও খবর তার কাছে নেই। তিনি জানান, আহতরা তিনজন, তবে গুরুতর নয়।
প্রসঙ্গত, আজ বুধবার সকাল থেকেই ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। বিভিন্ন পোস্টে বলা হয়, রাজধানীর শনির আখড়া, দনিয়া এলাকায় শিক্ষার্থীরা লাইসেন্সবিহীন গাড়ি আটকে দিচ্ছিল। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি পিক-আপকে আটকানোর চেষ্টা করছেন ছাত্ররা। এক পর্যায়ে সামনে থাকা এক ছাত্রের ওপর দিয়ে গাড়ি উঠিয়ে দেয় চালক।
সোশ্যাল মিডিয়া সূত্রে জানা যায়, 'শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হচ্ছিল। প্রতিটি গাড়ির ড্রাইভারের লাইসেন্স চেক করা হচ্ছিল। লাইসেন্স না থাকলে ড্রাইভারকে নামিয়ে ভাংচুর করা হচ্ছিল। একটি পিক-আপ ভ্যানের ড্রাইভারকে থামিয়ে লাইসেন্স চেক করার চেষ্টা করা হলে একজন ছাত্রের গায়ের ওপর দিয়ে উঠিয়ে দিয়ে চলে যায়। পরে সেই ছাত্রের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
জাবালে নূরের সেই বাসটির মালিক আটক
এদিকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় সড়কে দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দিয়ে হত্যার ঘটনায় জাবালে নূর পরিবহনের ঘাতক বাসের (ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭) মালিক মো. শাহাদাৎ হোসেনকে আটক করেছে র্যাব-১।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বুধবার সন্ধ্যায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, পুরো ঘটনাটি আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। এর অংশ হিসেবে ঘাতক বাসটির মালিককে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো হবে।
ঘাতক বাসচালকের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
এদিকে ওই পরিবহনের ঘাতক বাসচালকের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক কাজী তরিকুল ইসলাম জাবালে নূর পরিবহনের বাসচালক মাসুম বিল্লালকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এএইচএম তোয়াহা ৭ দিনেরই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত রবিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার বিমানবন্দর সড়কের হোটেল র্যাডিসনের সামনে জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসের প্রতিযোগিতায় নির্মমভাবে প্রাণ হারান শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আব্দুল করিম সজীব। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১৪ জন। তারা সবাই ফুটপাথে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ই-জাহান