পঞ্চায়েত। সামাজিক ব্যবস্থার এক অন্যতম ধারক ও বাহকের সমষ্টি। পঞ্চায়েত প্রথা বাংলার ইতিহাসের মতোই প্রাচীন। পঞ্চায়েত বলতে পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত পর্ষদকে বোঝায়। প্রাচীনকালে গ্রাম-সংসদ অথবা পঞ্চায়েত রাজা কর্তৃক মনোনীত বা কোন গ্রামের জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হতো। গ্রাম প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় পঞ্চায়েতগুলিতে সকল শ্রেণি ও বর্ণের লোকদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। কালের পরিক্রমায় এখনো কিছু পঞ্চায়েত বা সেই সব সামাজিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। যদিও আগের মতো সেইসব কার্যক্রম এখন তার তাদের মাধ্যমে হয় না। গ্রাম্য পটভূমিতে এখনো পঞ্চায়েতের স্রোতধারা মোটামুটি বহমান। রাজধানীতেও কয়েকটি পঞ্চায়েত ব্যবস্থা এখনো টিকে রয়েছে, যেগুলোর বয়স প্রায় ৪/৫ যুগের ওপর। বিশেষ করে রাজধানীর লালবাগ, বংশাল, গেন্ডারিয়া এবং যাত্রাবাড়িতে এখনো কয়েকটি পঞ্চায়েত সিস্টেম বা পদ্ধতি রয়েছে। এমনই একটি পঞ্চায়েত রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ির আদর্শ পঞ্চায়েত। বৃহত্তর যাত্রাবাড়িতে মোট ৫টি পঞ্চায়েত রয়েছে এর মধ্যে এই আদর্শ পঞ্চায়েত একটি। সূচনালগ্ন থেকেই এ পঞ্চায়েত বিভিন্ন দাতব্য ও সেবামূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে। সবচেয়ে আলোচিত যে উদ্যোগটি গত কয়েকযুগ ধরে তারা করে আসছে তা হল পঞ্চায়েতের মাধ্যমে কোরবানির মাংস বণ্টন। তাহলে একটু বিস্তারিত খুলেই বলা যাক।
এই পঞ্চায়েতের সদস্য বা 'ঘর' সংখ্যা হল প্রায় ২২০। প্রতি কোরবানির ঈদে এদের মধ্যে গড়ে ৭০/৮০টি পরিবার কোরবানি দিয়ে থাকে। আর বাকি দেড়শ পরিবার কোনো না কোনো কারণে কোরবানি দিতে পারে না। ঈদের আনন্দে যেন ভাটা না পড়ে তাই তাদেরকেও পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সমবণ্টন করে কোরবানির মাংস দেয়া হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে আদর্শ পঞ্চায়েতের প্রধান সর্দার মোজাফফর হোসেন বলেন, যেমন এবার প্রায় ৬০টি পরিবার পশু কোরবানি দিয়েছে। তারা তাদের জবাইকৃত পশুর অর্ধেক পঞ্চায়েতের মাঠে দিয়ে গেছেন। আর বাকি অর্ধেক তাদের নিজেদের। এছাড়া সে জবাইকৃত পশুর চামড়াও পঞ্চায়েতে জমা দিয়েছেন। এভাবে ৬০টি পরিবারের অর্ধাংশ করে গোশত জমা হওয়ার পর নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে তা কেটে ভাগ করা হয়। অর্থ্যাৎ গোশত দিয়েছে ৬০টি পরিবার। কিন্তু ভাগ হবে পঞ্চায়েতের ২২০টি পরিবারের মধ্যে। এবং আরেকটি বড় ভাগ দেয়া হবে গরীব ও দুস্থদের মাঝে। অর্থ্যাৎ যিনি কোরবানি দিয়েছেন তিনিও গোশত পেলেন এবং যিনি কোরবানি দেননি তিনিও গোশত পেলেন।
আর পশুর চামড়াগুলোর কী হয়? এবার তিনি বলেন, এগুলো মাদ্রাসায় দিয়ে দেয়া হয়। আর চামড়া বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থের ৫০ ভাগ প্রত্যাবর্তন করে গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হয়।
পঞ্চায়েতের সদস্য হতে চাইলে কী পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় এমন প্রশ্নের উত্তরে পঞ্চায়েতের প্রধান সর্দার মোজাফফর হোসেন বলেন, তিনটি পদ্ধতিতে আমরা প্রাথমিক বাছাই সম্পন্ন করি। যিনি এখানে জন্মগ্রহণ করেছেন, বৈবাহিক সূত্রে অথবা যিনি এখানে জায়গা জমি কিনে বাড়িঘর করেছেন। প্রাথমিক যাছাই বাছাই শেষে আমাদের পঞ্চায়েত সর্দাররা সিদ্ধান্ত নেন।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা