চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ইস্যুতে স্থানীয় এমপি, জেলা ও উপজেলার শীর্ষ নেতারা ‘টেনশনে’ পড়েছেন। চট্টগ্রামের চিহ্নিত কয়েকটি উপজেলায় জোট এবং দলীয় এমপি ও জেলা-উপজেলাসহ তৃনমূলের শীর্ষ ২০ নেতা নৌকার পক্ষে কাজ না করে কৌশলে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছেন, তাদের বিষয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা রিপোর্ট এবং দলীয় প্রতিবেদনও সংগ্রহ করা হবে বলে জানান কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড।
তবে চট্টগ্রামের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের পাশাপাশি নৌকার পক্ষে-বিপক্ষের প্রার্থীরা নির্বাচন পরবর্তীতে সাংবাদিক সম্মেলনসহ বিভিন্ন অভিযোগও তুলে ধরেছিলেন নানাভাবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ বা নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে কারা কাজ করেছেন, কারা করেননি সেসব কর্মকাণ্ডের উপর প্রতিবেদন ও বিরুদ্ধে কাজ করা নেতাদের বিষয়ে কঠোরভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ নির্দেশনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের নৌকা বিরুদ্ধে থাকা তৃনমূলের শীর্ষ নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম আতংক ও টেনশনে রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে নির্বাচনে কারা কাজ করেছেন, কার করেননি এমন শীর্ষ তৃনমূল নেতাদের অনেকেই নানা কৌশলে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় নেতাসহ হাইকমান্ডের সাথে যোগাযোগও শুরু করেছেন। শুক্রবার গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের এক সভায় তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনের কার্যক্রম তদারকিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সারা দেশে আটটি সাংগঠনিক টিম গঠনেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, উপজেলা নির্বাচনে দলের প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে মন্ত্রী, এমপি ও তৃনমূলের নেতা-কর্মীদের ভূমিকার বিষয়ে গোয়েন্দা রিপোর্ট, সাংগঠনিক রিপোর্টসহ বিভিন্ন যাচাই-বাছাই করা হবে। এতে দলের সাংগঠনিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তাছাড়া উপদেষ্টামণ্ডলী, সভাপতিমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের সমন্বয় করা হবে। আগামী শুক্রবার ওয়ার্কিং কমিটির সভায় কোন টিমে কারা থাকছেন তা নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা যেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক দিয়েছেন, সেখানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শেও নেতা-কর্মীরা কোনোভাবে বিরোধ বা বিপক্ষে কাজ করার কোনো অবকাশ নেই। তাছাড়া এ ধরনের বিরোধপূর্ণ আচরণও কোনোভাবেই কাম্য নয় বললেন কেন্দ্রীয় এ নেতা।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা যে নির্দেশনা দিয়েছেন। সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করবেন বলে জানান তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণে ২য় এবং তৃতীয় ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সন্দ্বীপ, রাঙ্গুনীয়া, রাউজান, হাটহাজারী, সীতাকুন্ড, আনোয়ারাসহ কয়েকটি উপজেলা কোনো প্রার্থী না থাকায় উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আবার অনেকেই উপজেলায় ছিল দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রত্যেক উপজেলায় গ্রুপিং-দলাদলির কারণে প্রতিটি গ্রুপেই বিভক্ত হয়ে পড়েছেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় ঐক্যের কারণে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ফটিকছড়ি ছাড়া বাকি উপজেলাগুলোতে দলীয় প্রার্থী বিনাভোটে নির্বাচন হয়েছে। ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়। এখানে জোটের এমপি ও জেলা-উপজেলার শীর্ষ কয়েকজন নেতা নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ছিলেন না এবং ভোটের দিন এলাকায়ও ছিলেন না। দক্ষিণ জেলার প্রত্যেক উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীর দাপট ছিল। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার পেছনে অদৃশ্য শক্তি কাজ করেছে বলে অভিযোগ নেতা-কর্মীদের। বাশঁখালী ও বোয়ালখালীতে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে না থেকে কৌশলে ভূমিকা রাখেন জোট ও দলীয় স্থানীয় এমপি ও কয়েকজন শীর্ষ নেতা। লোহাগাড়া ও চন্দনাইশেও চরম বিরোধের জেরে কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়েছিল। তবে সব মিলে জেলা দুই এমপি ও শীর্ষ এক নেতার নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে কাজ না করে কৌশলী ভূমিকার বিষয়ে তৃনমূলে চরম হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। একইভাবে সেই নেতা চেয়ারম্যান নির্বাচনেও বির্তকিত হয়েছিল। এতে সেই নেতার নেতৃত্বে আগামীর রাজনীতি করবেন কিনাও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এখন সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের উপরই।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন