‘বড় ভাইয়ের বদলে’ রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী সজল মিয়া (৩৪) কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। গত ৩০ এপ্রিল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই তাকে এ কাজ করতে হয়। মঙ্গলবার সজল এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো দোষ করিনি। আমি আসামি না। তারপরেও আমি কয়েদি!’
সজলের এ দাবি ঠিক কি না তার শুনানির জন্য মঙ্গলবার সকালে তাকে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে (প্রথম) হাজির করা হয়। কিন্তু এ দিন আদালত বসেনি। আদালতের কাঠগড়া থেকে হাজতে নিয়ে যাওয়ার পথে আসামি নিজেকে ‘সজল’ দাবি করেই এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন। তার বক্তব্য, বাদীপক্ষের প্ররোচনায় পুলিশ বড় ভাইয়ের বদলে তাকে ধরেছে।
ভুক্তভোগী সজল মিয়ার বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর ছোটবনগ্রাম পশ্চিমপাড়া মহল্লায়। তার বাবার নাম তোফাজ উদ্দিন। সজলের বড় ভাইয়ের নাম সেলিম ওরফে ফজল। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ফজল দীর্ঘদিন ধরেই পলাতক। তার অনুপস্থিতিতেই ২০০৯ সালের ২৮ আগস্ট মামলার রায় হয়। সেদিন খালাস পান অন্য চার আসামি।
দীর্ঘ ১০ বছর পর গত ৩০ এপ্রিল সজলকে গ্রেফতার করে নগরীর শাহ মখদুম থানা পুলিশ। সেদিন তাকে ফজল হিসেবেই আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এরপর কারাগারে পাঠানো হয়। পরে গত ২৬ মে সজল তার আইনজীবীর মাধ্যমে নিজের মুক্তি চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, আসামি বড় ভাইয়ের পরিবর্তে তিনি জেল খাটছেন। এ আবেদনের শুনানির দিন ধার্য ছিল মঙ্গলবার।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বিচারক মো. মনসুর আলীর একজন নিকাটাত্মীয় মারা গেছেন। তাই মঙ্গলবার আদালত বসেনি। তবে সজলের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বিচারক বুধবারই শুনানির জন্য দিন ধার্য করে দিতে বলেছেন আদালতের পেসকারকে। সে অনুযায়ী, বুধবার সজলকে আবার কারাগার থেকে আদালতে আনা হবে। তবে আদালতের পক্ষ থেকে শুনানির দিনে পুলিশকে তলব করা হয়নি।
সূত্র আরও জানায়, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ ট্রাইব্যুনালে কিছু কাগজপত্র পাঠিয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, মামলার রায় ঘোষণার আগে ফজল গ্রেফতার হয়ে হাজতি হিসেবে কারাগারে ছিলেন। তবে একই মামলায় এখন বন্দী কয়েদির সঙ্গে তার অনেক অমিল রয়েছে। মিলছে না উচ্চতাও।
সজল মিয়া বলেন, ‘আমি শুধু জানি বড় ভাইয়ের মামলাটা ছিল নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের। কিন্তু কেন মামলাটা হয়েছিল সেটাও জানি না। আমি ডাব বিক্রি করতাম। পুলিশ আমাকে বিনা দোষে জেলে পাঠিয়েছে। জেলে কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতে হয়। ‘এমবি-৪’ নম্বর ওয়ার্ডে থাকি। জেলে পুরনো কয়েদিদের বড় যন্ত্রণা। তারা খুব খারাপ আচরণ করে। বিনা দোষে এসব সহ্য করতে হচ্ছে।’
এদিন সজলের ভাই মো. বাবু, ভাবি আফরোজা বেগম, বোন পিয়ারি বেগম, উমে খাতুন, এবং দুলাভাই মো. কালুও আদালতে এসেছিলেন। তারা দাবি করেন, কারাবন্দী সজল মামলার আসামি না। আর আসামি ফজলের কোনো খোঁজ নেই। তিনি বেঁচে আছেন কি না তাও তারা জানেন না।
সজলের আইনজীবী মোহন কুমার সাহা বলেন, অপরাধী না হয়েও সজল সাজা ভোগ করছেন। পুুলিশ ভুল করে অথবা বাদীপক্ষের কাছে প্রভাবিত হয়ে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে। কিন্তু গ্রেফতার সজল যে আসামি নন তার সমস্ত প্রমাণ তাদের কাছে আছে। তিনি আশা করছেন, শুনানিতে বুধবারই মুক্তি পাবেন সজল। আর আদালতে তিনি নির্দোষ প্রমাণ হলে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগরীর শাহ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, তারাও চান না যে কোনো নির্দোষ ব্যক্তি সাজা খাটুক। কিন্তু গ্রেফতার আসামি যে ফজল সে ব্যাপারে মামলার সাক্ষীরা এফিডেফিট করে দিয়েছেন। সেটি আদালতে দাখিল করা হয়েছে। তবে আদালতের শুনানিতেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে যে আসল আসামি কে।
বিডি-প্রতিদিন/১১ জুন, ২০১৯/মাহবুব