হেমন্তের মাঝামাঝি সকাল। দূর্বায় কুয়াশা নেমেছে, বাতাসেও টের পাওয়া যাচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। সূর্যও যেন একটু আলসে। এমন দৃশ্য বাংলাদেশের প্রায় সব গ্রামেই দেখা যায়। তবে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার লালমতি গ্রামে এই সকালটা আরও একটু বেশি স্নিগ্ধ ও রঙিন।গ্রাম জুড়ে লাউয়ের মাচা। সেই মাচায় ঝুলছে নানা আকারের লাউ। মাচার ফাঁক গলে সকালের সূর্যের আলো গায়ে মেখে ঝলমল করছে সাদা-সবুজ লাউগুলো।
লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত লালমতি গ্রামজুড়ে চলছে সবজি আবাদ। বরবটি, কচুরচড়া ও লাউয়ের চাষই এখানে সবচেয়ে বেশি হয়। কারও জমিতে লাউয়ের মরা পাতা ফেলা হচ্ছে, কেউ ঘাস পরিষ্কার করছেন, কেউ বা লাউ কাটায় ব্যস্ত। গ্রামসংলগ্ন পদুয়ার বাজারে প্রতি বৃহস্পতিবার ও রবিবার হাট বসে। এই দুই দিনে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত সময় কাটান কৃষকেরা। কেউ লাউ কেটে জমির পাশে সড়কে সারি সারি সাজিয়ে রাখছেন, কেউ সাইকেলের দুই পাশে ঝুড়ি ঝুলিয়ে লাউ নিয়ে যাচ্ছেন বাজারে। মেইলগেট এলাকার ত্রিমোহনী মোড়েও চলছে লাউ বিক্রির ধুম।
কৃষক সিরাজ মিয়া বলেন, ‘লালমতিতে বহু বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে লাউ চাষ হয়। আমি ২০ শতক জমিতে লাউ করেছি। একশ লাউ পাইকারি ২৫০০ টাকায় বিক্রি করি, এতে লাভ কম হয়। নিজের হাতে বিক্রি করলে লাভ দ্বিগুণ হয়।’
আরেক কৃষক আবদুল মালেক বলেন, ‘এবার লাউয়ের ফলন ভালো হলেও দাম কম। সার-বীজের দাম বেশি হওয়ায় লাভ কম হবে। আমাদের লালমতি ছাড়াও পাশের সুধন্যপুর, উত্তর বিজয়পুর, দক্ষিণ বিজয়পুর, হোসেনপুরে লাউয়ের বাণিজ্যিক চাষ হয়।’
বিদেশফেরত কৃষক মিজানুর রহমান জানান, ‘দেশে ফিরে দুই বছর ধরে লাউ চাষ করছি। গত বছর একশ লাউ বিক্রি করে ৭-১০ হাজার টাকা পেয়েছি। এবার ৩ হাজারও পাচ্ছি না। অনেক সময় আরও কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
পাইকার সাদেক মিয়া বলেন, ‘সব কৃষকের লাউ একসঙ্গে উঠেছে, তাই দাম পড়ে গেছে। আগে পাইকারি ৮০ টাকা দরে কিনতাম, এখন তা ২৫-৩০ টাকায় নেমে এসেছে।’
খুচরা ক্রেতা কালাম মিয়া বলেন, ‘লালমতি থেকে পদুয়ার বাজার পর্যন্ত অটোরিকশা ভাড়া ২০ টাকা। যে লাউ লালমতিতে ২০ টাকায় পাওয়া যায়, পদুয়ায় গিয়ে সেটিই হয় ৬০ টাকা। এসব বিষয় তদারকি দরকার।’
সদর দক্ষিণ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির খান জানান, ‘উপজেলায় প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে লাউ চাষ হয়। এর মধ্যে পাহাড়ি এলাকায় ৮ হেক্টর, আর লালমতি ও আশপাশের এলাকায় প্রায় ২ হেক্টর জমিতে লাউ হচ্ছে। কৃষকেরা এতে খুশি, আগামীতে চাষ আরও বাড়বে।’
বিডি-প্রতিদিন/সুজন