প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলোতে রাজাকার ঢুকে পড়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। সম্প্রতি ঘোষণার পর স্থগিত করে দেওয়া রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের নাম থাকায় তিনি এই প্রশ্ন তুলেছেন।
শুক্রবার বিকালে রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালি বাজারে পার্টির এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, একটা অবাক কাণ্ড দেখলাম। রাজশাহীতে যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন, তাদের নাম রাজাকারের তালিকায়। এ নিয়ে আমাকে অনেকে প্রশ্ন করেছেন, প্রশাসনের ভেতর কি রাজাকার ঢুকে পড়েছে? প্রশ্নটা আমারও তাই।
তিনি বলেন, রাজাকারের প্রেতাত্মারা যে এখনও সক্রিয় সেটা এই তালিকার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়ে গেছে। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে চলেছে। এখনও যদি আমরা স্বাধীনতাবিরোধীদের হাত দুর্বল করতে না পারি, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন না হলে স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যাবে না।
দেশে এখন ‘নব্য রাজাকার’ সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে বাদশা বলেন, স্বাধীনতার আগে ২২টা পরিবার এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করত আর পশ্চিম পাকিস্তানে টাকা পাঠিয়ে দিত। আমরা তাদের রাজাকার বলতাম। এখন যারা বাংলাদেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে, তারা নব্য রাজাকার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শ্রমিকরা বিদেশে কষ্টার্জিত রেমিটেন্স দেশে পাঠায়। দেশ সমৃদ্ধ হয়। দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। আর কিছু নব্য রাজাকার দেশের টাকা পাচার করে। বিদেশে বাড়ি-গাড়ি করে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। টাকা পাচার, লুটপাট, অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। আর শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এমপি বাদশা বলেন, বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে শ্রমিক এবং কৃষক। কৃষকরা দেশের ১৭ কোটি মানুষের মুখের খাবার জোগান। কিন্তু তাদের স্বার্থ দেখা হয় না। গত বছর কৃষকরা বাম্পার ফসল ফলালেন। দাম পেলেন না। কারণ, কোনো নীতিমালা নেই। আজ রাষ্ট্রায়াত্ত্ব কল-কারাখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতার জন্য আন্দোলন করতে হয়। কিন্তু এসব কল-কারখানার কর্মকর্তারাই দামি গাড়িতে ঘুরে বেড়ান। এটা হতে পারে না।
বাদশা বলেন, রাষ্ট্রায়াত্ত্ব পাটকলগুলোতে শ্রমিকরা বেতন পান না। গ্র্যাচুইটির টাকা পান না। সরকারি পাটকলে উৎপাদিত পণ্য গুদামে পড়ে থাকে। কিন্তু বেসরকারি পাটকলগুলো ঠিকই লাভ করে। এই অবস্থার কারণ কী? এর কারণ, এক শ্রেণির আমলার ষড়যন্ত্র। তারা বেসরকারি পাটকলের মালিকদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব পাটকলগুলোকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে চায়। এখন রাষ্ট্রায়াত্ত্ব পাটকলের পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে এক ডলার কমিয়ে দিলে সেগুলো বেসরকারি পাটকলের আগে বিক্রি হবে। শ্রমিকদের বেতন হবে। কিন্তু এটা করা হয় না। কারণ, রাষ্ট্রায়াত্ত্ব কারখানাগুলোকে বন্ধের চক্রান্ত চলছে। এই চক্রান্ত রুখে দিতে হবে। কারণ, সরকারি কল-কারখানা বঙ্গবন্ধু করেছেন। এগুলো বন্ধ হতে দেয়া যায় না।
শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি শ্রমিকদের সঙ্গে আছে। আমি নিজেও আছি। ওয়ার্কার্স পার্টি সব সময় শোষিত, বঞ্চিত, মেহনতি মানুষের জন্য লড়াই করেছে। মানুষে মানুষে বৈষ্যম্যের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। বঞ্চিত মানুষের মুক্তি না আসা পর্যন্ত এই সংগ্রাম চলবে।
কৃষকদের নায্যমূল্য নিশ্চিত, রাজশাহী পাটকলের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ এবং সামাজিক নায্যতা, সমতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ২১ দফার ভিত্তিতে সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বানে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পবা উপজেলার কাটাখালি পৌরসভা কমিটি এই জনসভার আয়োজন করে।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এন্তাজুল হক বাবু, জেলার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আশরাফুল হক তোতা, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের জেলার সভাপতি ফেরদৌস জামিল টুটুল এবং জাতীয় কৃষক সমিতির জেলার সভাপতি কয়েস উদ্দিন।
এছাড়াও বক্তব্য দেন জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ফরজ আলী, জেলা যুবমৈত্রীর সভাপতি মনির উদ্দিন পান্না, মহানগর ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি জুয়েল খান প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির নগর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, নাজমুল করিম অপু, আবদুল মতিন, সদস্য মতিউর রহমান, অসিত পাল, বোয়ালিয়া থানা (পূর্ব) সভাপতি সীতানাথ বণিক প্রমুখ।
সভাপতিত্ব করেন কাটাখালি পৌর সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম। জনসভা পরিচালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আলাল মোল্লা।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব