করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মোকাবিলায় বায়োকেমিস্ট এবং মলিকুলার বায়োলজিস্টদের কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছে গ্রাজুয়েট বায়োকেমিস্ট এসোসিয়েশন (জিবিএ)। সম্প্রতি বাংলাদেশে কভিড-১৯ এর সংক্রমণ ও বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে আরটি-পিসিআর বিশেষজ্ঞ হিসেবে বায়োকেমিস্ট এবং মলিকুলার বায়োলজিস্টদের করণীয় নির্ধারণ বিষয়ে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করে জিবিএ।
সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে জিবিএ প্রাথমিকভাবে ৭০ জন এবং ২য় ধাপে আরও ৮০ জন গ্রাজুয়েট বায়োকেমিস্ট এবং মলিকুলার বায়োলজিস্টকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণে কীভাবে পিসিআর ল্যাবে কাজ করতে হবে এবং অন্যান্য দেশে কীভাবে কাজ করা হচ্ছে সে বিষয়ে অন-লাইনে ট্রেনিং দিচ্ছে জিবিএ।
প্রশিক্ষিত এই বায়োকেমিস্ট এবং মলিকুলার বায়োলজিস্টদেরকে কাজে লাগানোর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে জিবিএ’র কনফারেন্সে অংশহগ্রণকারী বক্তরা। এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও জাতীয় পরামর্শক কমিটিতে বায়োকেমিস্ট এবং মলিকুলার বায়োলজিস্ট, মহামারি বিশারদ, ভ্যাকসিন গবেষক ও অর্থনীতিবীদকে অন্তর্ভুক্তের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
জিবিএর সভাপতি প্রফেসর ড. হোসেন উদ্দিন শেখর এর সভাপতিত্বে এবং জেনারেল সেক্রেটারি আবু সাঈদ মুহাম্মদ শামীম এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। বক্তরা বলেন, করোনা ২১৫টি দেশে ছড়িয়ে মহামারি আকার ধারণ করেছে। বিশ্বে প্রায় ২৮ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে যার মধ্যে প্রায় ২ লাখ মানুষ মারা গেছে।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলেও বর্তমানে এর সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং মৃতের সংখ্যাও ১৪০ ছাড়িয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক টেস্ট করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও আইসোলেশনের মাধ্যমে কয়েকটি দেশ করোনা প্রতিরোধে সফলতা পেয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো টেস্ট বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভুল। বিশ্বব্যাপী আরটি-পিসিআর হলো করোনা শনাক্তকরণে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড মেথড।
এটি এমন একটি প্রযুক্তি, যা সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয় না। এই মলিকুলার প্রযুক্তিটি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরএনএ/ডিএনএ নিয়ে গবেষণার কাজে প্রতিনিয়তই ব্যবহৃত হয় এবং বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি, মাইক্রোবায়োলজি এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ও শিক্ষকরা সবসময়ই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকেন। সে কারণে এসমস্ত বিভাগের ছাত্র ও শিক্ষকগণের এই প্রযুক্তি সম্পর্কে তত্ত্বীয় এবং প্রায়োগিক উভয় প্রকার জ্ঞান আছে। বিশ্বব্যাপী করোনা শনাক্তকরণে এই সকল বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগানো হলেও বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম। এদেশের বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রযুক্তি এবং বিশেষজ্ঞ থাকলেও এখন পর্যন্ত তাদেরকে কাজে লাগানো হয়নি।
সভায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে করোনা প্রতিরোধ একটি যুদ্ধ। বিশ্বব্যাপী এই যুদ্ধে যারা এখন পর্যন্ত সফলতা দেখিয়েছে তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। এই যুদ্ধে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও একটি সমন্বিত কার্যক্রম দরকার যাতে চিকিৎসকদের পাশাপাশি গবেষকদের কাজ করার সুযোগ থাকবে।
বিশিষ্ট ভ্যাকসিন গবেষক ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসি কাদরী বলেন, বর্তমানে যে টেস্ট করা হচ্ছে তার কোয়ালিটি কন্ট্রোল করা প্রয়োজন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কয়েকদিন পরপর টেস্ট কিট পরিবর্তন করা হচ্ছে। ভাইরাল ট্রান্সমিশন মিডিয়ার (ভিটিএম) পরিবর্তে নরমাল স্যালাইনে স্যাম্পল সংরক্ষণ করা হচ্ছে যা স্যাম্পলের গুণগত মান কমিয়ে দিচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. শরিফ আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পত্র দেয়ার পরও কোন জবাব না পাওয়া এবং জাতীয় পরামর্শক কমিটিতে বায়োকেমিস্ট এবং মলিকুলার বায়োলজিস্ট কাউকে না রাখা দঃখজনক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জেবা ইসলাম সেরাজ বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরটি-পিসিআর মেশিন এবং দক্ষ জনবল রয়েছে।
কাতারে কর্মরত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভাইরোলজিস্ট ড. রুবায়েত হাসান তানভী বলেন, তারা ভাইরাসটির জিনোম সিকোয়েন্স করে প্রয়োজনীয় টেস্ট কিট তৈরি করে নিয়েছেন। সরকারের সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশের মলিকুলার বিজ্ঞানীরাও টেস্ট কিট তৈরি করতে পারেন।
জিবিএর সভাপতি প্রফেসর ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে ভিটিএম তৈরি ও ভাইরাসটির জিনোম সিকোয়েন্স করে প্রয়োজনীয় টেস্ট কিট তৈরি করা সম্ভব।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ