প্রতিবছরই বন্যা এবং খরায় তিস্তাপাড়ের মানুষের দীর্ঘশ্বাস ভারি হচ্ছে। তিস্তা নদীর দুইপাড়ের লাখ লাখ মানুষের দুঃখ, দুর্দশা লাঘব করতে পারে একমাত্র মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তিস্তাপাড়ের মানুষের পানির জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। সেই সাথে পাল্টে যাবে দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা।
সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে ডালিয়া পয়েন্ট থেকে ব্রহ্মপুত্রের সংযোগ স্থল পর্যন্ত নদী খনন করা। নদীর দুই তীর রক্ষা বাধ, নদী ড্রেজিং করে যে মাটি উত্তোলন হবে সেই মাটি নদীর দুপাশে ভরাট করে ইপিজেট, সোলার পাওয়ারপ্লান্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ করা হবে। এতে হাজার হাজার মানুষের কর্ম সংস্থান হবে।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করার কথা রয়েছে চীনা প্রকৌশলীদের। চীনা প্রকৌশলীদের একটি প্রতিনিধি দল ডালিয়া ব্যারেজ ও তিস্তার নদীর বিভিন্নস্থান পরিদর্শন করে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছেন। বর্তমানে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে গিয়ে আটকে রয়েছে। এই প্রকল্পে অর্থায়ন কে করবে বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় ফাইল পরিকল্পনা কমিশনের লাল ফিতেই বন্দি হয়ে আছে। এসব তথ্য জানা গেছে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে।
শুকনো মৌসুমে তিস্তার চারিদিকে দেখা যায় ধুধু বালুচর। পানির অভাবে তিস্তা নদীর আশেপাশের এলাকায় পানি অনেক নীচে নেমে গেছে। পানির অভাবে অকেজো হয়ে পড়ার উপক্রম দেশের বৃহত্তম তিস্তা সেচ প্রকল্প। ভারত তিস্তার উজানে গজলডোবায় বাধ দিয়ে একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে তিস্তা প্রকল্পে প্রতিবছরই পানির ঘাটতি দেখা দেয়।
আবার বর্ষাকালে প্রবল পানির তোড়ে ব্যারেজ ও আশপাশের অঞ্চল ঝুঁকির মুখে পড়ে। তখন ডালিয়া ব্যারেজের ৪৪টি গেট রাতদিন খুলে রেখেও পানি সরানো কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে শুকনো ও বর্ষা দুই মৌসুমে তিস্তা অববাহিকার মানুষের সময় কাটে দীর্ঘশ্বাসে। শুকনো মৌসুমে ভারতে পানির ওপর নির্ভরতা থাকায় তিস্তা অববাহিকার ৫ জেলা নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় পানির জন্য হাহাকার দেখা দেয়। তিস্তা নিয়ে সরকারের মহা-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে শুকনো মৌসুমে ভারতে কাছে পানির জন্য হাত পাততে হবে না।
এছাড়া তিস্তা নদীকে ঘিরে প্রায় ১২০০ কিলোমিটারের বেশি খাল রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এসব খালে পানি ধরে রাখতে পারলে সারা বছর জুড়ে এই পানি ব্যবহার করা যাবে। নদীতে বারো মাস পানি থাকলে কৃষিকাজ থেকে আরম্ভ করে এ অঞ্চলের আর্থ সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হবে। সেই সাথে পাল্টে যাবে দেশের চেহারা। তাই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ জরুরী ভিত্তিতে নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন নদী নিয়ে কাজ করছেন এধরনের একাধিক সংগঠনের নেতারা।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী জৌতি প্রসাদ বলেন, ৫ বছর আগের এই প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এখন আরও বৃদ্ধি পাবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি সরকারের ওপরের মহলের। তিনি আশা প্রকাশ করেন দ্রুত এই মহা পরিকল্পনার প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত হবে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর