ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চ যেভাবে বলেছেন, এরপরে আর স্বাধীনতার ঘোষণার তেমন কোনো প্রয়োজন ছিল না। একটি দলের নেতারা বলেন- মানুষ নাকি দিগভ্রান্ত হয়েছিল। মানুষ বুঝতে পারছিল না, কী করবে। তাহলে রাজারবাগের পুলিশ কীভাবে বুঝেছিল, সারাদেশের পুলিশ কীভাবে বুঝেছিল কী করতে হবে। আওয়ামী লীগের দোষ হলো, সত্য কথাটাও ঠিকমতো বলতে পারে না। একটি দল মিথ্যা বলতে বলতে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যায়, যেন মনে হয় এটাই সত্য।’
আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে মুজিববর্ষ স্মারকগ্রন্থ ‘অনশ্বর পিতা’র মোড়ক উন্মোচন ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স থেকেই সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হয়েছিল। অন্যকেউ হলে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণার দাবিদার তারাই করতো। কিন্তু আমরা পুলিশ, আমরা এই দাবিটি সাহস করে করতে পারিনি। আমার রাইফেলের গুলি যখন পাকিস্তানি সৈন্যদের দিকে নিক্ষিপ্ত হয় তখনই যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছি। তখন তো আর কারো ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করিনি। জাতির পিতা ৭ মার্চ যেভাবে বলেছেন, এরপরে আনুষ্ঠানিকভাবে আর স্বাধীনতার ঘোষণার তেমন কোনো প্রয়োজন ছিল না। হয়তো আন্তর্জাতিক কিছু বাধ্যবাধকতার কারণে জাতির পিতা এটি ঘোষণা করেছেন। রাজারবাগে যে পুলিশ কনস্টেবলরা গুলি করেছিলেন, কোন ঘোষণা তাদেরকে উজ্জীবিত করেছিল?’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সত্য দিবালোকের মতো স্পষ্ট এবং বাংলাদেশ পুলিশ প্রমাণ করেছে আমরা ৭ মার্চের ভাষণের পর শপথ নিয়েছিলাম দেশমাতৃকার জন্য প্রয়োজনে রক্ত দেবো, জীবন দেবো। সেই সত্যের বহিঃপ্রকাশ কিন্তু সারা বাংলাদেশেই ঘটেছিল। শুধু রাজারবাগ পুলিশ লাইন নয়। ৭ মার্চের ভাষণ রাজারবাগের পুলিশকে উজ্জীবিত করেছিল। একটি দলের সিনিয়র নেতারা বলা শুরু করেছেন, তাদের নেত্রী নাকি এক নম্বর মুক্তিযোদ্ধা। এটা হাস্যকর...।’
তিনি আরও বলেন,‘ রাজারবাগ থেকে ওয়ারলেসে সারাদেশে ঘোষণা হয়েছিল রাজারবাগে আক্রমণ হয়েছে। রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে ইপিআর সব জায়গায় যখন আক্রমণ হলো। এ বিষয়টি জানিয়ে যুদ্ধের জন্য একেবারে প্রস্তুতির চূড়ান্ত যে কাজটি পুলিশের পক্ষ থেকে তা শুরু হয়েছে। প্রায় প্রতিটি জেলায় পুলিশ লাইন্সে যতো অস্ত্র ছিল সব অস্ত্র-গুলি সাধারণ মানুষকে দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছিলেন, মানিকগঞ্জ পুলিশ লাইন্স থেকে অস্ত্র পেয়েছেন এবং প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে যতো পুলিশ সদস্য জীবন দিয়েছেন, আমার মনে হয় বাংলাদেশের আর কোনো বাহিনীর এতো সংখ্যক প্রাণহানি হয়নি। অত্যন্ত ছোট একটি বাহিনী ছিল আমাদের, ৩৩ থেকে ৩৪ হাজারের মতো। তার মধ্যে ১৪ হাজার মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। যুদ্ধে ডিআইজি থেকে শুরু করে পুলিশ সুপাররা যোগ দেন। আমরা জানি চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার, কুমিল্লার পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে একজন ডিসট্রিক্ট অ্যান্টি করাপশন অফিসার ছিলেন সেখানে শহীদ হয়েছিলেন।’
বিডি-প্রতিদিন/শফিক