মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। বাবা নেই। অভাব নিত্যসঙ্গী হলেও কখনও লেখাপড়ায় হাল ছাড়েননি অন্তরা। পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এবার এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে মেধা তালিকায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন অন্তরা। তবে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেলেও অর্থাভাবে মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে নিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তার মা।
অন্তরা খাতুন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়নের চন্ডিপুর বড় ছয়ঘটি গ্রামের আলাউদ্দিনের মেয়ে। তার বাবা জন্মের দুই বছর পর মারা যান। একমাত্র ভাই সোহেল রানাকে টাকার অভাবে পড়াতে পারেনি অন্তরার পরিবার। বর্তমানে সে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তবে অন্তরাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন মা রসুনা বেওয়া। মেয়েকে অনেক কষ্টে স্কুলে ভর্তি করেন। অন্তরা খাতুন স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চন্ডিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
এরপর মেয়েকে লেখাপড়া করানোর কোনো অর্থ সংগ্রহ করতে পারছিলেন না রসুনা বেওয়া। বসতভিটা ছাড়া আর কোনো জমি নেই তার। নিরুপায় হয়ে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ শুরু করেন। এরপর মেয়েকে ভর্তি করেন বাঘা সরকারি শাহদৌলা কলেজে। সেখানেও অন্তরা জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
রসুনারা বেওয়া বলেন, ‘মেয়ে মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। মেয়ের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন আগে থেকেই ছিল। কিন্তু ভর্তির টাকা জোগাড় করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।’
অন্তরা খাতুন বলেন, নিজের পড়ালেখার পাশাপাশি প্রতিবেশী ছেলেমেয়েদের টিউশন করিয়েছি। আবার কখনও মায়ের সঙ্গে হাতের কাজ করেছি। এ আয় থেকে নিজের পড়ালেখা খরচের পাশাপাশি সংসারের খরচ করেছি।
চন্ডিপুর উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, অন্তরা নিজের চেষ্টায় পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। এবার এমবিবিএস কোর্সে মেধা তালিকায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে সংসার চলে তাদের। তিনি বলেন, অন্তরার মা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। ফলে মেডিকেলে পড়ার অর্থের জোগান দিতে এ পরিবারের পক্ষে খুবই কঠিন হবে। সমাজের বিত্তবান বা শিক্ষানুরাগী কেউ সহযোগিতা করলে তার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।
এদিকে অন্তরার পাশে দাঁড়িয়েছে র্যাব। র্যাব-৫ অধিনায়কের পক্ষ থেকে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মারুফ হোসেন খান চন্ডীপুর গ্রামে অন্তরার বাড়িতে হাজির হয়ে তার হাতে ভর্তির যাবতীয় খরচ প্রদান করেন।
মারুফ হোসেন খান জানান, র্যাব-৫ অধিনায়ক বিষয়টি জানার পরই তাকে সহায়তার সিদ্ধান্ত নেন। তার মতো মেধাবীকে সহায়তা করতে পেরে র্যাব সদস্যরা খুশি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল