ঢাকা কলেজের একটি ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে এক ছাত্রলীগ নেতাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছেন বলে কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র্যাবের একটি দল আজ রবিবার ইফতারের আগে কলেজের ‘আন্তর্জাতিক’ ছাত্রাবাসের ১০১ নম্বর কক্ষে অভিযান চালান।
নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষে নাহিদ নিহতের ঘটনায় শনাক্ত ইমন এই কক্ষে থাকতেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ডিবি পুলিশ ও র্যাবের অভিযান শেষে দুটি মোবাইল সেট জব্দ ও জহির হাসান জুয়েল নামের এক শিক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। আটক জুয়েল ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সর্বশেষ আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।
গত ১৯ এপ্রিল বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের পক্ষ হয়ে সংঘর্ষে জড়ান নাহিদ। একটি বড় ছাতা হাতে তাকে সংঘর্ষের একদম সামনে দেখা যায় অন্তত দুই ঘণ্টা ধরে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে ইটের আঘাতে আহত হয়ে সড়কে পড়েন নাহিদ। এরপর তার ওপর নির্মম হামলা চালায় হেলমেটধারী কিছু যুবক।
তদন্তকারীরা জানান, নাহিদকে সেদিন দুজন পরপর কোপায়। এরমধ্যে সবচেয়ে হিংস্র দেখা গেছে শনাক্ত হওয়া রাব্বীকে। রাব্বীর আগের হামলাকারীকেও শনাক্ত করা হয়েছে। নাহিদ হত্যার পরদিন হাসপাতালে মারা যান দোকানকর্মী মুরসালিন। মুরসালিনকেও কুপিয়েছে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী। মুরসালিনের হত্যাকারীকেও শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের নজরদারিতে রেখেছে তদন্তকারীরা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার সংবাদমাধ্যমকে জানান, নিহতের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। সব ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। কয়েকজনকে শনাক্তও করা হয়েছে।
গত ১৮ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সংঘর্ষ হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে ফের দফায় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ, যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধ শতাধিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া সংঘর্ষের এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাদের একজন ডেলিভারিম্যান, অন্যজন দোকান কর্মচারী।
সংঘর্ষের সূত্রপাত নিউমার্কেটের ভেতরে থাকা ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুড নামের দুই দোকান কর্মচারীর দ্বন্দ্ব থেকে। সেই দোকান দুটি সিটি করপোরেশন থেকে মকবুলের নামে বরাদ্দ রয়েছে। তবে কোনো দোকানই নিজে চালাতেন না মকবুল। রফিকুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম নামে দুজনকে ভাড়া দিয়েছেন দোকান দুটি। রফিকুল ও শহিদুল পরস্পর আত্মীয়।
সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করে। একটি মামলা বিস্ফোরক আইনে এবং অন্যটি পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে করা হয়। দুই মামলায় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীসহ মোট ১২০০ জনকে আসামি করা হয়।
এছাড়া সংঘর্ষে নিহত নাহিদের বাবা মো. নাদিম হোসেন ও মুরসালিনের ভাই নুর মোহাম্মদ বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় দুটি হত্যা মামলা করেন। এই চার মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে প্রায় এক হাজার ৪০০ জনকে। তবে তিনটি মামলার মধ্যে শুধু পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় বিএনপি নেতা মকবুলসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ মামলার বাদী নিউমার্কেট থানার পুলিশ পরিদর্শক ইয়ামিন কবীর।
মকবুল হোসেন ছাড়াও এ মামলায় আরও যাদের নাম রয়েছে, তারা হলেন আমির হোসেন আলমগীর, মিজান, টিপু, হাজি জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী, হাসান জাহাঙ্গীর মিঠু, হারুন হাওলাদার, শাহ আলম শন্টু, শহিদুল ইসলাম শহিদ, জাপানি ফারুক, মিজান বেপারী, আসিফ, রহমত, সুমন, জসিম, বিল্লাল, হারুন, তোহা, মনির, বাচ্চু, জুলহাস, মিঠু, মিন্টু ও বাবুল।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ