মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদ উপহার স্বরূপ রাজশাহীতে ১ হাজার ১৪৯ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পেল স্বপ্নের আধা পাকা ঘর। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় তৃতীয় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদ উপহার হিসেবে এসব জমিসহ ঘর দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরে রাজশাহী জেলা প্রশাসন ভূমিহীন গৃহহীনদের মাঝে এই ঘরগুলো বুঝিয়ে দেন।
এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকালে পবা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে ঘর হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।
পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও লসমী চাকমার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইয়াসিন আলী।
ঈদ উপহার হিসেবে ঘর পেয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তার দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধী সাহানুর রহমান নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় একটি বাড়ি পেয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার দুটি পা নেই, আমি পঙ্গু। কোনো থাকার জায়গা ছিল না কিন্তু আজকে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের একটি ঘর পেয়েছি। যেখানে আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সুখে জীবন কাটাতে পারব।’
সুবিধাভোগী পারভিন সুলতানা বলেন, আমি গরীব-অসহায়। আমি মানুষের বাড়িতে আশ্রিতা হিসেবে থাকতাম। মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঘর দিয়েছে সেইজন্য আমি কৃতজ্ঞতা।
সুকতারা কাশিয়িডাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ঘর পেয়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, আমার দুই সন্তান নিয়ে একটি ঝুপড়িতে থাকতাম। প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটা ঘর দিয়েছে। আমি শেখ হাসিনা মায়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে দোয়া করবো।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না।’ তার এই ব্রতকে সামনে রেখেই মুজিববর্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় তৃতীয় পর্যায়ে রাজশাহীতে ১১৪৯ গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবার দুর্যোগ সহনীয় সেমিপাকা ঘর পেলেন। সারা দেশে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের এই মহাযজ্ঞে রাজশাহীতে এর আগে প্রথম ধাপে ৬৯২টি ও দ্বিতীয় ধাপে ৮৫৪টি সুদৃশ্য রঙিন টিনশেডের সেমিপাকা বাড়ি পেয়েছেন গৃহহীন ও ভূমিহীনরা।
সুবিধাভোগীদের উদ্দেশে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান এবং বাস্তবায়ন করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ করছেন। আগে ঈদ উপহার হিসেবে হতদরিদ্র মানুষ পেত লুঙ্গি, পাজ্ঞাবি, শাড়ি ও খাদ্য সামগ্রী কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঈদ উপহার দিচ্ছে একটি আধা পাকা ঘর। যা ইতিহাসে বিরল ঘটনা। সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করছেন, আর আপনাদের সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করতে হবে। আপনাদের সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে দারিদ্রতাকে জয় করতে হবে এবং স্বাবলম্বী হয়ে সরকারের হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। তবেই প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে বলে জানা তিনি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সে একযোগে সারাদেশে ৩২ হাজার ৯০৪টি পরিবারকে একটি সেমিপাকা ঘরসহ দুই শতক জমির দলিল হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও সারাদেশে ৪৯২টি উপজেলায় একযোগে যুক্ত ছিল এই অনুষ্ঠানে। ভিডিও কনফারেন্সে চারটি উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। সেগুলো হলো-ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার পোড়াদিয়া বালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, বরগুনা সদরের খাজুরতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিরাজগঞ্জ সদরের খোকশাবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোসা. আরজিয়া বেগম, ভাইস চেয়ারম্যান মো. ওয়াজেদ আলী খান, হুজুরীপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মর্জিনা পারভীন, নওহাটা পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ মো. আজিজুল হক, পবা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক ইসলামসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন