৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার চর সৈয়দপুর এলাকায় অটোরিকশা (ইজিবাইক) চালককে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। অটোরিকশা চালক আপন হত্যার মিশনে ছিল তারই দুই বন্ধু। তাকে হত্যার পরে ছিনতাইকৃত অটোরিকশাটি কুমিল্লার হোমনা এলাকায় বিক্রি করে দেন তারা।
এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ও ছিনতাই চক্রে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে সদর মডেল থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) নাজমুল আলম। এসময় উপস্থিত ছিলেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ জামান ও পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হাওলাদার প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার সৈয়দপুর এলাকার তিন বন্ধু নাহিদ, মো. আমির হোসেন ওরফে আমিন ও মো. আপন। তিনজনই পেশায় অটো চালক। নাহিদ এবং আপন এলাকার স্থানীয় এক মেয়েকে পছন্দ করতো। সম্প্রতি এই বিষয়কে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। এই পরিস্থিতিতে তাদের আরেক বন্ধু আমির হোসেন নাহিদকে অপর বন্ধু আপনের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে এবং দুইজন মিলে আপনকে হত্যার জন্য অটো ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। এছাড়াও ছিনতাইকৃত অটো বিক্রি করতে চোরাই চক্রের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সাথে চুক্তি করে।
ঘটনার দিন ২৫ এপ্রিল রাত সোয়া ১১টায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার চর সৈয়দপুর কাঠপট্টি রেইনবো ডাইংয়ের পেছনে নাহিদ ও আমির হোসেন নেশাজাতীয় দ্রব্য নিয়ে আপনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। পরে আপন আসলে তারা একত্রে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে। একপর্যায়ে নাহিদ ও আমির হোসেন আপনকে ঝাপটে ধরে গলা চেপে রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
পরে তারা লাশ ফেলে রেখে আপনের অটো গাড়ি ছিনতাই করে চুক্তি অনুযায়ী বিল্লাল, ইসমাইল ও সাইদুলের কাছে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। এ ঘটনার পরে সদর মডেল থানা পুলিশের একটি টিম অপরাধীসহ সহযোগীদের গ্রেফতার করে এবং মামলার রহস্য উন্মোচন করে। অভিযান পরিচালনা করে এজাহার নামীয় আসামি মাহমুদ হোসেন ওরফে গেদার ছেলে নাহিদ (২২) ও মো. ফালান মিয়ার ছেলে মো. আমিরকে (২৩) গ্রেফতার করা হয়। তারা উভয়ে সৈয়দপুর ফকিরবাড়ী এলাকায় বসবাস করে।
পরে তাদের দেওয়া তথ্য মতে, কুমিল্লা জেলার হোমনা হতে তাদের সহযোগী আব্দুল করিমের ছেলে মো. ইসমাইল খন্দকার (২৩), মো. হেলাল মিয়ার ছেলে মো. বিল্লাল মিয়া ও হোমনা থানার শ্রীনগর গ্রামের মৃত মানিক মিয়ার ছেলে মো. সাইদুলকে (২৩) গ্রেফতার করা হয়। ইসমাইল ও বিল্লাল উভয়ে হোমনা থানার রামকৃষ্ণপুর এলাকার বাসিন্দা। তাদের নিকট থেকে ছিনতাইকৃত অটো উদ্ধার করা হয়।
এদিকে, দুপুরে নিহত অটোরিকশা চালক আপনের বাবা সাত্তার, মা আনোয়ারা, বোন সাবিনা ও খালা সানজানা সদর মডেল থানায় এসে খুনিদের বিচার দাবিতে জড়ো হয়ে আহাজারি করতে থাকলে আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) নাজমুল আলম তাদের আশস্ত করে বলেন, খুনিদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতেই খুনিদের বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই