রাজধানী ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ নিম্ন আয়ের এলাকার ৭২ শতাংশ কিশোরী-তরুণী উন্মুক্ত গোসলখানায় তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকেন। তাদের মধ্যে ৭৯ দশমিক ২ শতাংশ তরুণী মৌখিক সহিংসতা এবং ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণী যৌন নিপীড়নের শিকার হন।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের একটি জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল শনিবার ঢাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থার ওয়াশ স্পেশালিস্ট এস এম তারিকুজ্জামান। রাজধানীর ধলপুর, মালেক মেম্বার, আইজি গেট এবং ম্যাচ কলোনি বস্তিতে এ বছরের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত ‘নিরাপদ গোসলখানা সবার জন্য সবখানে’ শীর্ষক এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। এতে অংশ নেন ১৫-২৪ বছর বয়সী ৪১৭ জন কিশোরী ও তরুণী।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ৭২ শতাংশ কিশোরী-তরুণী উন্মুক্ত গোসলখানায় তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকেন। ওই এলাকার কেউবা আশপাশের উঁচু ভবন থেকে, কেউ উন্মুক্ত গোসলখানায় গোসলের দৃশ্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে কি না, তা নিয়ে ভয়ে থাকেন অনেকে। এ ছাড়া উন্মুক্ত গোসলখানায় পুরুষ ও বয়স্ক নারীদের বকাঝকা, যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনাও ঘটে।
জরিপের ৯৮ শতাংশই নিত্যদিনের গোসলের কাজে উন্মুক্ত গোসলখানা ব্যবহার করে থাকেন। এর মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ গোসলখানায় রয়েছে নারীদের জন্য পৃথক জায়গা। প্রতিটি গোসলখানার বিপরীতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা গড়ে ৩৫ থেকে ৪৫ জন। সর্বোচ্চ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭০ এবং সর্বনিম্ন ২০।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬৮ দশমিক ৬ শতাংশ কিশোরী ও যুবতীরা টয়লেট ব্যবহার করতে গিয়ে কোনো না কোনো সময় সহিংসতার শিকার হয়েছেন। সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই চার কলোনির টয়লেট বা গোসলখানায় কোথাও ঠিকমতো স্যানিটারি সামগ্রী নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থায় মাসিক স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা বেশ কঠিন।
এ ছাড়া এসব এলাকার নারীদের বেশ দূর থেকে পানি আনতে হয় এবং ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ নারী জানান, বেশি সময় লাগে ও সন্ধ্যা হয়ে যায়। ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের ওয়াশ স্পেশালিস্ট এস এম তারিকুজ্জামান জানান, ঢাকা শহরের ধলপুর, মালেক মেম্বার কলোনি, আইজি গেট কলোনি ও ম্যাচ কলোনিতে ১৫টি গোসলখানা স্থাপনের কাজ করে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি)। পাশাপাশি এই চার কলোনির মানুষদের, বিশেষ করে মেয়েদের নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়। এই সমীক্ষা এবং তিন মাসব্যাপী সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইনে যৌথভাবে কাজ করেছে বিওয়াইএস নামক একটি যুব সংগঠন।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মানিক কুমার সাহা জানান, বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজারের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের এলাকা রয়েছে। জমির অপ্রতুলতার পাশাপাশি স্যুয়ারেজ লাইনের চ্যালেঞ্জও এখানে বিদ্যমান। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে কিশোরী ও যুব নারীদের ওপর। নিরাপদ গোসলখানার অভাবে পুরুষ ও নারীদের একই সঙ্গে গোসলের কাজ সারতে হয় বলে গোপনীয়তা ক্ষুন্ন হয়। সহিংসতার ঘটনা ঘটতে থাকে।
পিএসটিসি থেকে প্রকল্প সমন্বয়কারী শিরোপা কুলসুম বলেন, একটি গোসলখানায় যখন এতগুলো মানুষ গোসল করে, তাদের চাহিদা পূরণে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়। নারীদের ওপর এর প্রভাব আরও বেশি; বিশেষ করে মাসিকের সময় অভাবনীয় সংকট হয়ে দাঁড়ায়। মাসিক ব্যবস্থাপনা কষ্টকর হওয়ায় তৈরি হচ্ছে তাদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকিও। সহিংসতার ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি তাদের যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য নিশ্চিতেও প্রয়োজন নিরাপদ গোসলখানা।
সংবাদ সম্মেলনে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার সেমন্তী মঞ্জরী ও ‘সেন্ট্রাল অ্যান্ড নর্দান রিজিওন’-এর প্রধান আশিক বিল্লাহ প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল