লাল শাপলা ফুলে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে বরিশালের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু উদ্যান। শাপলায় মুগ্ধ উদ্যানে বেড়াতে আসা সৌন্দর্য পিপাসুরা। উদ্যানের পূর্বপাশের লেকের শাপলা ফুলের সৌন্দর্য দেখতে ভিড় করেন তারা। বঙ্গবন্ধু উদ্যানটি নয়নাভিরাম করতে উদ্যানের পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে থাকা লেকেও শাপলা ও পদ্ম ফুলের সমাহার ঘটানোর দাবি জানিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক।
ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, বৃটিশ শাসনামলে ১৮৯৬ সালে বাংলার গর্ভনর লেফটেন্যান্ট স্যার আলেকজান্ডার ম্যাকেনজির বরিশাল সফরকে কেন্দ্র করে তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এনডি বিটসন বেল কীর্তনখোলা নদীর শহর রক্ষা বাঁধের পাশে ৯.৪৭ একর আয়তনের ভূমি নিয়ে এই খোলা উদ্যানটি প্রতিষ্ঠা করেন। উদ্যানের পূর্বপাশে শহর রক্ষা বাঁধ লাগোয়া লেক এবং দক্ষিণ-পশ্চিমপাশেও রয়েছে বিশাল ডিসি লেক। তখন প্রতিষ্ঠাতা বিটসন বেল’র নামানুসারে ৫৫০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৪৫০ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট এই উদ্যানের নামকরণ করা হয় ‘বেলস পার্ক’। এখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকার প্রধান ও জাতীয় নেতারা জনসমাবেশে বক্তব্য রাখেন। ১৯৭২ সালে এই উদ্যানে জনসভায় বক্তৃতা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
১৯৯৬ সালে তৎকালীন সরকার এই উদ্যানের নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’ নামকরণ করে। এই উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর আগমন স্মরনীয় করে রাখতে ২০১১ সালে উত্তরপাশে একটি ‘মুক্ত মঞ্চ’ এবং শহর রক্ষা বাঁধ ও উদ্যানের মাঝখানের লেকের উপরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়। উদ্যানের চারপাশে ওয়াকওয়ে, আলোকসজ্জা ও সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। উন্মুক্ত এই মাঠ ঘিরে বিনোদনপ্রেমীদের আনাগোনা সারা বছর। রাষ্ট্রপ্রধান ও জাতীয় নেতাদের সমাবেশ ছাড়াও বৃক্ষমেলাসহ বিভিন্ন মেলা, সাংস্কৃতিক আয়োজন এবং জাতীয় দিবস ভিত্তিক কুচকাওয়াজের জন্য ব্যবহৃত হয় উদ্যানটি।
এর সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান উজিরপুরের শাপলা বিল থেকে শাপলা উদ্ভিদের মোথা (গোল) এনে উদ্যানের পূর্ব পাশের লেকে বপন করেন। শাপলা ছড়িয়ে পড়ে পুরো লেকে। গত কয়েক বছর অল্প কিছু লাল শাপলা ফুল ফুটলেও এবার অনেকটা ছেয়ে গেছে লাল শাপলায়। খোলা প্রান্তরে মুক্ত বাতাস গ্রহণ কিংবা শরীর চর্চা করতে আসা দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হন লাল শাপলার সৌন্দর্য্য। শাপলা ফুলের কথা মনে হলেই চোখে ভেসে ওঠে উজিরপুরের সাতলার শাপলার বিল। শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঐতিহাসিক জায়গায় সারি সারি শাপলা ফুল দেখতে প্রতিদিন ভিড় করেন সৌন্দর্য পিপাসুরা।
বঙ্গবন্ধু উদ্যানের লেকে শাপলা ফুলের সমাহার ঘটানো তৎকালীন জেলা প্রশাসক (বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক) এসএম অজিয়র রহমান মুঠোফোনে জানান, বঙ্গবন্ধু উদ্যানের সৌন্দর্য বর্ধন ও দর্শনার্থীদের বিনোদন এবং জাতীয় ফুল শাপলাকে নতুন প্রজন্মের মাঝে পরিচিত করতে তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুব্রত কুমার দাস বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় ফুল সাদা শাপলা। শাপলা এক ধরনের বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। বাংলাদেশে এর ৫০ থেকে ৬০টি জাত আছে। বসন্তের শেষে এই ফুল ফুটতে শুরু করে এবং শরতের শেষ দিকে বিলীন হয়। তবে জুন-জুলাইতে ফুল ফোটে বেশি। লাল শাপলা একবার ফুটলে ৩-৪ দিন থাকে। সাদা শাপলা রাতে ফোটে আবার দিনে সূর্য্যের তাপে বুজে যায়। হার্ভেসিয়া জাতীয় এই উদ্ভিদ একবার জন্মালে পুরো জলাশয় ছেয়ে যায়। শুধু সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য হলে উদ্যানের দক্ষিন-পশ্চিমপাশের লেকেও শাপলার সমাহার ঘটানো যায়।
বঙ্গবন্ধু উদ্যানের লেকে লাল শাপলা ফুল প্রস্ফুটিত হওয়ায় দর্শনার্থীরা বিষয়টি উপভোগ করছে বলে জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু উদ্যানের সৌন্দর্য বর্ধনের একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প পাশ হলে উদ্যানটি আরও নয়নাভিরাম করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল